একটা অদ্ভুত মৃত্যুর ঘটনা থেকে রুদ্রের প্রতিক্রিয়া দিয়ে উপন্যাসের শুরু। এই মৃত্যুতেও রুদ্র ভীষণ স্বাভাবিকভাবে আচরণ করে সবার থেকে দূরে সরে যায়। মৃত্যু রহস্যটা অনেক আগেই স্বপ্নে বুঝে ফেলা সত্ত্বেও রুদ্র সেই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি। কারণ, ও বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলে সমাজের অসাধু মানুষকে স্বপ্নে দেখা বলে ভুল বুঝায়। অথচ কাকতালীয়ভাবে ওর অনেক স্বপ্নই পূরণ হয়ে যায়। এখান থেকেই আল্ট্রা পিরামিড ধাঁচে লেখক তার চমৎকার লেখকশৈলীর প্রমাণ দিয়েছেন। আপাত দৃষ্টিতে রুদ্র ভীষণ স্ট্রেট ফরোয়ার্ড, কেয়ারলেস, বিরক্তিকর একটা চরিত্র। অথচ ভিতরে ভিতরে তার সবার সাথেই খাতির চলে। প্রচন্ড বুদ্ধিমান একটা ছেলে সে। বন্ধু, শত্রু সবার কাজেই অদ্ভুতভাবে সে সবার আগে এগিয়ে আসে। শুধু নিজের ব্যাপারেই তার গুরুত্ব নেই। তাকে সারাবছর পড়াশোনা করতে না দেখলেও রহস্যজনকভাবে দারুণ রেজাল্ট করে ফেলে। এই ছেলেটাকেই ক্লাসমেট রোদেলা ভালোবাসে। ভালোবাসার শাসনে বেধে রাখে। রুদ্র সাহস পায় না এই মেয়েটির হাত ধরে রাতের শহর দেখার। তবু রোদেলা বললেই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তার বারান্দায় গিয়ে হাজির হয়। উপন্যাসটিতে রুদ্রের আমাদের সমাজকে নিয়ে বলা প্যারানরমাল কথাগুলো বড্ড ভাবায়। এখানেই হয়তো বইয়ের নামকরণের সার্থকতা । রুদ্র একটু আলাদা এঙ্গেলে চিন্তা করতে শেখায়। রুদ্রের সাথে সাথে একঝাঁক বন্ধুর জীবনকেও দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা। সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে- রুদ্র গোপনে সমাজের অপরাধীদের খুন করে কিনা এই রহস্য বড্ড নিগুঢ়। বইয়ের কিছু প্রিয় লাইনঃ- – আমি তোমায় চুপি চুপিই ভালোবাসবো। ভালোবেসে খুন হবো। অজ্ঞাত প্রেমিক নামে আমার দাফন হবে। তবু তোমার ঠিকানায় খবর পাঠাবো না। – এই রুদ্র, আমার মতো যত্ন করে কেউ তোমায় ভালোবাসতে পারবে না। – কেবল অসুখীরাই ঘুমায় অ-সুখের তাড়নায়। -আমার ঠিক তোমাকেই চাই। তোমাকে ভালোবাসাতেই আমার সুখ, আমার অসুখ। -আচ্ছা রুদ্র, জগতের এই সাতশো কোটি মানুষ শরীরে শরীর ঘেঁষে, গায়ে গায়ে লেগে থেকে, এত চিৎকার করে পাশে আছি বলেও মানুষগুলো এমন একলা কেন? (সবচেয়ে প্রিয় লাইন) – সাহসী সেই মানুষটাই-যে কোন নারীর আবেগকে পুঁজি করে পরাজিত হবার নাটক করে না। – মানুষের একান্ত নিজের জন্য কিছুটা সময় দেওয়া উচিত। নিজেকে জানার জন্য, বুঝার জন্য, নিজের জন্য।