চিত্রনাট্য রচনার সময় আমি শুধু নাটক বা নাটকীয় ঘটনাকে প্রাধান্য দিইনি, লালনের জীবন ও তাঁর দর্শন যথা সম্ভব স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি। শুধু ব্যক্তি লালন নয়, সামগ্রিকভাবে বাউল-ফকিরদের সংকট-সমস্যা, তাদের বেঁচে থাকার লড়াই, সমাজের মূলস্রোতের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, গোষ্ঠীভুক্ত নারী-পুরুষদের ভেতরকার সম্পর্ক ও সংঘাত, তাদের মনোজগতের টানা পোড়েন থেকে শুরু করে বহির্জগতের প্রবল চাপ, সবই প্রয়োজন মতো তুলে ধরতে চেয়েছি। কিছু উদ্দেশ্যহীন বিচ্ছিন্ন মানুষ দলবদ্ধ হলেই বাউল হতে পারে না, অলিখিত বা অস্পষ্ট কিছু নীতি-নিয়মের ওপর বাউল সম্প্রদায়ের জীবন চালিত হয়। তার অর্থ, বাউল একটি সম্প্রদায়, পূর্ণ-পরিণত না হলেও একটি ধর্ম। বাউল এমন একটি ধর্ম যা কোনো ধর্মকে গুরুত্ব দেয় না, জীবনের স্বাভাবিক-সহজ ধর্মকে আশ্রয় করে জীবন যাপন করার পদ্ধতির নির্দেশ দেয়। আমাদের ভালো লাগুক আর না লাগুক একথা মানতেই হবে, বাউল সম্প্রদায় প্রচলিত ধর্ম ও সমাজের বিরুদ্ধে এক প্রবল প্রতিবাদ। লালনকে জানতে হলে বাউলদের এই প্রতিবাদের দর্শন অনুভব করতে হবে, লালনের নিজের জীবনচর্চার বৈশিষ্ট্য ও তাঁর জীবনদর্শনকে জানতে হবে। এই জানার আগ্রহ নিয়েই আমি চিত্রনাট্য রচনায় আগ্রহ দেখিয়েছিলাম।