“আলো নেই- ১ম খন্ড” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
‘আলাে নেই’ হচ্ছে সেই জাতের উপন্যাস, যাতে উঠে এসেছে অবিভক্ত ভারত তথা বঙ্গের এক ঐতিহাসিক কালখণ্ড। সামনে স্বাধীনতা, অথচ সাধারণ মানুষের সামনে কোনাে আশার আলাে নেই। দেশের প্রধান রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় কংগ্রেস গরীব কৃষকের স্বার্থে কোনাে ভূমি সংস্কারের পরিকল্পনা না করে অন্য ধরনের কাজে জড়িয়ে আছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষ ধোঁয়া ছড়াচ্ছে হিন্দু মহাসভা আর মুসলিম লিগ। শের-ই-বাংলা—অখণ্ড বঙ্গভূমির প্রধানমন্ত্রী (তখন মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীই বলা হতাে) ফজলুল হক বলেছেন, পলিটিক্স অফ দ্য বেঙ্গ ল ইজ দ্য ইকনমিক্স অব দ্য বেঙ্গল। টালমাটাল এই কালখণ্ডের ভেতর চরিত্র হিসেবে উপন্যাসের পাতায় পাতায় হাজির হয়েছেন মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু, মহম্মদ আলি জিন্না, জওহরলাল নেহরু, শরৎচন্দ্র বসু, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, দিলীপকুমার রায়, আব্বাসউদ্দিন, প্রমথেশ চন্দ্র বড়ুয়া, কাজী নজরুল ইসলাম, সজনীকান্ত দাশ, অদ্বৈত মল্লবর্মণ, কানন দেবী, মুজফফর আমেদ, ফজলুল হক, সােহরাওয়ার্দি, অহীন্দ্র চৌধুরী, হেমেন্দ্রকুমার রায়, বঙ্কিম ঘােষ, অতুল্য ঘােষ, প্রফুল্ল চন্দ্র সেন প্রমুখ। উপন্যাসের এই মহাসময়ের ভেতর কোর্টের পেশকার অনন্ত ঘােষাল তার স্ত্রী রত্না ঘােষাল, তাদের সন্তানেরা টুনু, পানু, তনু, গৌর, খােকানিজের নিজের মতাে করে খুলনা শহরে জীবনের। নানা বাঁক পেরতে থাকে। বাঙালি হিন্দু ও বাঙালি মুসলমান-জমিদার, মধ্যবিত্ত, ভূমিহীন চাষী, প্রান্তিক মানুষেরা নানা সময়ে উঁকি দিয়েছে এই উপন্যাসের ঐতিহাসিক ব্যক্তি-মানুষদের পাশাপাশি। সবে গড়ে ওঠা কমিউনিস্ট আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টি, তেভাগার দাবীতে কমিউনিস্ট পার্টির কৃষক সংগঠন গড়ে তােলা—এই সব ঐতিহাসিক ক্ষণকেও শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় তুলে এনেছেন তার এই উপন্যাসে। আলাে নেই’ আসলে বাঙালি হিন্দু ও মুসলমানের এক মহাক্রান্তি লগ্নের ছবি। যে ছবি সময়কে পেরিয়ে মহাকালের অংশ হয়ে গেছে।