“গানের ভিতর দিয়ে” বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখা
আলাে এবং রজব আলী দম্পতির একান্ত সংসারে প্রধান আসবাবই হলাে সুর ও কাব্য। তাদের প্রধান কাজ হলে সুর ও কাব্যের সাধনা করা। দুই সাধক কিন্তু নিরক্ত নিরাবেগ নিষ্কাম নিরামেষি সাধক নয়। তারা রসের পুজারী, সেই রস সৃষ্টি ও ভােগে তাদের আনন্দ। মনের অনুভূতির মতাে শরীরী আবেগ অনুভূতিতেও তাদের সুখের সাড়া আছে। এই সুখের সাড়ায়ও সংগীতের ভূমিকা উপেক্ষিত নয়। যখন তারা নিঃশব্দে একে অপরকে ভালােবাসে তখন সেই ভালােবাসার সরব শৃঙ্গার হলাে সংগীত।
তবে আলাের মনে সংশয় আছে রজবের সংগীত বােধ নিয়ে। যে কবি রবীন্দ্র নজরুল প্রমুখের মত সংগীত স্রষ্টা নন, তাদের সংগীত বােধের ফাকটুকু আলাে দেখিয়ে দেয়। কিন্তু রজব তার কবি অহংকার ও পৌরুষের জোরে আলাের সংশয়টুকু বুঝে উঠতে চায় না। এই দ্বন্দ্ব তাদের ভালােবাসাকে আরও গভীর করে তােলে। কিন্তু সমাজের ভেদবুদ্ধি রজব আলীর স্ত্রী হিসেবে আলাে বসুকে গ্রহণ করে না। আলােকে ধর্মান্তরিত হতেই হবে। রজব এই ধর্ম গ্রহণ বর্জন বিতর্কের শিকার হতে চায় না। দুই শিল্পীর মানবীয় প্রেমই শেষ কথা। ভেদবুদ্ধির শৃঙ্খলে আটকে থাকা পরিবার থেকে তারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখে। ভালােবাসার এই গল্পে ধীরে ধীরে রবীন্দ্র-নজরুলের সংগীত বােধের একটি নিবিড় পাঠ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি কাব্য বিচারের একটি ধরনও ফুটে ওঠে। স্বাতন্ত্র উজ্জল সাদ কামালীর শিল্প-নৈপুণ্যে বিশিষ্ট এবং মননশীল এই অভিনব উপন্যাস বাংলা কথা সাহিত্যে একটি নতুন সংযােজন।