‘মৃত্যুর জন্ম ও মৃত্যু’ প্রচলিত ধারার উপন্যাস নয়। এই আখ্যানে নারী পুরুষের তথাকথিত প্রেম ভালবাসার বয়ান নেই, মানুষের আটপৌরে জীবনের আট প্রহরের মুখরোচক কাহিনি কিংবা হালকা মনোরঞ্জনের কোনো রকম সুযোগ পাওয়া যাবে না। মানব সভ্যতার সব চেয়ে নিকৃষ্ট কয়েকটি উদ্ভাবনকে যেমন- নেতা-নেতৃত্ব, দেশ, জাতি, সম্প্রদায়, দাঙ্গা যুদ্ধ ইত্যাদি নির্মমভাবে সমালোচনা করা হয়েছে। মানুষ যত পরম্পরকে আঘাত করতে চেয়েছে ততই তার অন্তর বিদ্বেষ এবং ঘৃণায় আচ্ছন্ন হয়েছে। যতই মানুষ পরস্পরের প্রতি ঘৃণা এবং বিদ্বেষে তার অন্তর বিষাক্ত করেছে ততই তার ধ্বংস অনিবার্য হয়েছে। এই হল উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু। আমি পরিণত মনের মানুষদের জন্য লিখি। পরিণত একটি জীবন-ব্যবস্থা নিরূপণের আকাঙ্খায় আমি সারা জীবন জীবনের দিকে নজর রেখেছি। কীভাবে মানুষ যথার্থ মানুষের সভ্যতা নির্মাণ করতে পারে এটাই আমার জীবন-সাধনার বিষয়। আমরা যে সভ্যতাকে মানুষের সভ্যতা বলে বড়াই করি আদতে তা জানোয়ারের সভ্যতা বললে কম বলা হয়। এমন জানোয়ারের সভ্যতাকে আমি মানুষের সভ্যতায় পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি এবং সেই লক্ষ্যেই সাহিত্যের মাধ্যমে বেছে নিয়েছিলাম। আমার লেখা আপনার ভাল লাগতে পারে নাও লাগতে পারে তবে একথা জোর দিয়ে বলব- সাহিত্য জীবনকে পথ দেখায়, জীবনকে জীবনরূপে চিহ্নিত করে, মানুষকে মানুষ হতে উৎসাহিত করে। আমি আমার সাধ্য মতো মনুষ্যত্বের সেই পথরেখা দেখবার চেষ্টা করে গেলাম, আমৃত্যু তাই করে যাব। একই লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রিয় পাঠকবন্ধুদের কাছে ‘মৃত্যুর জন্ম ও মৃত্যু’ আমার অন্তরের নিবেদন।
শাহ্যাদ ফিরদাউস
কলকাতা