“মৃত্যু” বইটিতে লেখা ফ্ল্যাপের কথা: ‘মৃত্যু’-ছােট্ট এই শব্দটিকে ঘিরে রয়েছে জগতের তাবৎ ভয়ভীতি ও রহস্য। মজার বিষয় হলাে, আমরা যখন অন্য সকল মানুষকে মরণশীল ভাবি, তখন সচেতনভাবেই নিজেকে বাদ দিয়ে ভাবি। জীবনের মহাসত্য মৃত্যুকে এক মুহুর্তের জন্যেও স্মরণের পরিসীমায় স্থান দিতে রাজি নই আমরা। কেবল মৃত্যুই যে আমাদেরকে হাত ধরে নিয়ে যেতে পারে সসীম জীবন থেকে আমাদের অনিবার্য। গন্তব্য অনন্ত মহাজীবনে, এ ভাবনা কখনাে স্থান পায় না আমাদের চিন্তনে।
মুত্যুকে অপশক্তির কারসাজি বলেই মনে করতাে প্রাক-ধর্মীয় যুগের জনমানুষ। ফলে মৃত্যুর নেপথ্য শক্তির অস্তিত্ব ও প্রকৃতি সম্পর্কে তাদের মনে নানা জল্পনা-কল্পনার উদ্রেক হয়। ধর্মই প্রথম মৃত্যুর বিমূর্ত উপলব্ধিকে মানুষের কাছে একটা ঐশ্বরিক বিষয়রূপে উপস্থাপনের প্রয়াস পায়। ধর্মকে অবলম্বন করেই সারস্বত সমাজ মৃত্যুর সুলুকসন্ধানে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেন। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমার অনিবার্য ফলশ্রুতিতে মানুষের চেতনায় সঞ্চারিত বিশ্বাসে যুক্ত হয়েছে ধর্ম ও বিজ্ঞানের এক দ্বান্দ্বিক বৈপরীত্য। প্রতিহত করতে না পারলেও মৃত্যুর আগমন বিলম্বিত করার মন্ত্র খুঁজে পেয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। এটি মুদ্রার এপিঠ। ওপিঠে রয়েছে মৃত্যুর থাবার নিচে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকগণের নিদারুণ অসহায়ত্ব।
উন্নত বিশ্বে মৃত্যু সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণার বিষয়সহ মৃত্যুকেন্দ্রিক নানা বৈচিত্র্যময় বিষয় স্থান পেয়েছে বইটিতে। বইটিকে হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে বিশ্ব সাহিত্যের সুবিশাল ভান্ডার ঘেঁকে তুলে আনা মৃত্যু-বিষয়ক কবিতার পঙক্তি, উদ্ধৃতি ও অমৃত বচনে এটি হয়েছে পরিপুত। মৃত্যুর মধুরিমা বাঁশির সুর লহরির মতােই ঝরে পড়েছে বইটির পাতায় পাতায়। সাহিত্যের সুললিত সুষমায় ও নান্দনিক অভিব্যক্তিতে রচিত এই বইটি পড়তে পড়তে পাঠক নিজের অজান্তেই ঢুকে পড়বেন মৃত্যুর এক সুনন্দ প্রতিচ্ছায়ায়। মৃত্যুর পর নেপােলিয়নকে নিয়ে লেখা হয়েছে তিন লক্ষাধিক বই, অথচ সমগ্র বিশ্বে মৃত্যু নিয়ে লেখা বইয়ের সংখ্যা এক ডজনও হবে না।