আমি। হ্যাঁ আমি জানি। এটা সবাই বলে। এমন উত্তর আশা করেনি সেই নির্মল হাসির ছেলেটি। প্রতুত্তরে বলল তাই ? কে বলল তোমাকে যে তোমার চোখ সুন্দর ? তোমার চোখ তো ছোট ছোট। চোখ সুন্দর হয় তাদের , যাদের চোখ হয় বড় বড়। এমন মজা করেই সেদিনের আড্ডা শেষ হল। ছেলেটা বলল আগামী রবিবার সকাল সাতটায় আসতে পারবে ? আমি ভেবেই উত্তরটা দিলাম- হ্যাঁ পারবো। সেই দিন ওর ক্লাস আছে আট টার সময়। যথা কথা তথা কাজ। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন সকালে সেই ছেলেটির অপেক্ষা আমার চারিদিকে কেউ নেই। তারপর কথা হল দু’জনের। সেই ছেলেটি একই ডিপার্টমেন্টের দুই বছরের সিনিয়র ভাই। জানা হল অনেক কিছু। যে ব্যাপারটা আমার মনে খুব নাড়া দিল । সেটা হচ্ছে এই যে এত সুন্দর এত মায়াবী একটা ছেলের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে তার সৎ মায়েদের অত্যাচারে। মানুষের সৎ মা থাকতে পারে, কিন্তু সৎ মায়েদের অত্যাচার খুব মর্মস্পর্শী। তারপর এক মাস ছয় দিন পরে দুজনের দেখা। টিপু বলল আগামী বৃহস্পতিবার আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। এমন কথার ছলে আমিও বলে দিলাম আগামী বৃহস্পতিবার কেন আজকেই না কেন ? আর তখনি সাত পাঁচ না ভেবেই মাত্র ১ মাস ছয় দিনের মাথায় ঐ দিনেই বিয়ে করলাম টিপুকে । ৫৫৫ টাকার দেনমোহর বিয়ে। শরীয়াত অনুযায়ী। এতে আমার কোন আপত্তি নেই। সে তো বলেছিল এক টাকা। যেখানে টাকার থেকে মন বড়, সেখানে টাকায় কি বা আসে যায় ? বাসায় এসে জানালাম কারও তেমন কোন আপত্তি নেই। কেননা টিপুর প্রতি সবার একটা সফট কর্ণার ছিল। এর আগে আমার পরিবার টিপুকে দেখেছে। অন্যদিকে টিপুর পরিবার থেকেও কোন আপত্তি করে নাই । টিপুর বড় ভাবী আমার জন্য একটা নীল শাড়ী পাঠিয়েছিল। তিনি মানুষ হিসেবে ভাল ছিলেন।
তারপর সেই নীল শাড়ী পরে অনেকটা নাটকের মত চলে গেলাম শ্বশুর বাড়ী। গিয়েই বললাম আর কোন টেনশন নেই। আমি এসে গেছি। বাড়ীর ছোট বউকে সবার উষ্ণ অভ্যর্থনা। বেশ ভালই কাটছিল। তবে একটা ব্যাপার কিছুতেই এডজাস্ট করতে পারছিলাম না। পরিবারের মানুষগুলো একে অন্যের কাছে বদনাম করত। যা কখনই আমি আমার পরিবারে দেখেনি। বিয়ের এক বছর পর আমার একটা ফুটফুটে সন্তান হলো। ওকে ঘিরেই এখন সব। এ যেন সৃষ্টিকর্তার পরম নেয়ামত। বেবীকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পড়াশুনার বিঘ্ন ঘটল। এমন কি শারিরীক অসুবিধাও হলো।
শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গেলো। তাই আমাকে ব্লাড নিতে হল। এই প্রবলেম অবশ্য আমার ছোটবেলা থেকেই ছিল। ওদিকে টিপু সব সময় ধর্মের কথা বলত। কিন্তু সেই অনুযায়ী কাজ করত না। আমার প্রতি তার কোন খেয়াল নেই। ঐ পরিবারের ঐ পরিবেশে বেবীকে নিয়ে থাকটা দুরুহ ব্যাপার হয়ে গেল। তাই টিপুকে বলেই মোহাম্মদপুরে মায়ের বাসার সাথে বাসা নিলাম। এতে মায়ের সাপোর্ট পাব। ততদিনে টিপুর মাস্টার্সের রেজাল্ট হল। ফার্ষ্ট ক্লাস সেকেন্ড হওয়া টিপু এখন চাকরী করে “ইত্তেফাকে”। তখন থেকেই টিপুর নিষ্ঠুর আচরণ গুলোর আঁচ পেতে থাকি। একদিকে ছোট মনমন (মেয়ে) কাঁদছে অন্যদিকে আমি রান্না করছি। মেয়েকে নেওয়ার মত কেউ নেই। মেয়ে কাঁদছে কেন, এই বলে টিপু সেদিন রাত ১২ টায় বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
মনে খুব আঘাত পাই। এখানে আমার কি বা করার আছে? তবুও মুখ খুলে কিছু বলি নি টিপুকে। এমন অসংখ্য ঘটনার মধ্যে টিপুর নিষ্ঠুরতা দেখা যায়। মনে হাজারো প্রশ্ন। শরীরে ব্লাড নিতে হয় আমার। সেজন্য একই বড় বোনের কাছে যেতে হত। কোন দিন টিপুর এ ব্যাপারে কোন দায়িত্ব ছিল না।