“কাছে দূরে” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
দীর্ঘ পাঁচ বছর তিন মাস পর বাড়ি ফিরছি আমি। ব্যস্ত শহর তবুও কী শূন্য মনে হচ্ছে। যখন বাড়িতে পৌঁছেছি তখন সন্ধ্যা। রাস্তায় হলুদ লাইটপােস্ট জ্বলে উঠেছে।
শাে শাে বাতাস বইছে।
পরিবর্তনহীন নগরের এই গলিতে হাঁটছি আমি। সেই একই এঁকে বেঁকে যাওয়া পিচঢালা পথ ধরে বাড়ি ফেরা। কত বছর পর বাড়ি ফিরছি! দরজার ওপাশে কেউ একজন আমার অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
দরজায় টোকা দিয়ে ডেকে উঠলাম, মা!
যে দরজায় আমার স্পর্শ ও মা ডাকের মধুর কণ্ঠস্বর ছিল না। যে দরজার শিকলে, কবজায় মরচে পরে গেছে, আজ কত সহজেই ক্যাচ ক্যাচ শব্দে খুলে গেল। যেন একটি অবুঝ সন্তান দাড়িয়ে আছে মায়ের সামনে।
কালাে বুটের বারবার লাথি খেয়েও যে চোখ কখনাে বিন্দুমাত্র লাল হয়নি, সেই চোখ কত সহজেই ভিজে উঠলাে। মা’র সিঁথির কাছে একগাছি চুল পেকে গেছে! চোখের নিচে কালাে দাগ। চামড়া যেন মাংস থেকে ছেড়ে দিয়েছে। বহুদিন পর বাড়ি ফিরছি আমি। অনেক বদলে গেছে বাড়িটা। হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল দেয়াল ঘেঁষে, যে আমগাছটা আকাশ ছোঁয়ার স্পর্ধা নিয়ে বড় হয়েছিল। শ্যাওলা পড়েছিল। বহু প্রাচীন সেই গাছটা কোনাে এক কালবৈশাখী ঝড়ের রাতে ভেঙে গেছে।