বিশ্বখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক আবদুলহামিদ আহমদ আবুসুলাইমান কর্তৃক ইংরেজীতে রচিত ‘Marital Discord : Recapturing the Full Islamic Spirit of Human Dignity’ এবং আমেরিকান নও মুসলিম প্রফেসর ড. জেফরি লাং কর্তৃক লিখিত ‘Losing My Religion : A Call for Help’ বই দুটির বাংলায় অনুবাদকৃত পাণ্ডুলিপি একত্র করে ‘বৈবাহিক সমস্যা ও কোরআনের সমাধান’ নামে প্রকাশ করা হয়েছে।
বইটিতে আল কোরআনের ‘দারাবা’ ইস্যুটি যুক্তিতর্কসহ উপস্থাপন করা হয়েছে, যা এ সময়ের অত্যন্ত আলোচিত বিষয়। বইটিতে তথাকথিত পুরুষদের দ্বারা যে নারী নির্যাতন হয় তার পথ যেমন রুদ্ধ হবে তেমনি ‘ইসলামের ছিদ্রান্বেষীদের ‘ইসলাম নারী নির্যাতন সমর্থন করে’-এই চিরায়ত অপবাদের পথও রুদ্ধ করবে। বইটি ইসলাম পিপাসু পাঠক, গবেষক ও চিন্তাবিদদের নিকট একটি সুখ পাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
স্ত্রী পেটানো কি ইসলাম সমর্থন করে? -এ প্রশ্নটি দীর্ঘকাল ধরে ধর্মপরায়ণ শিক্ষিত মুসলিম নারীদের মনে কাঁটা হয়ে বিঁধে ছিল। বিভিন্ন সময়ে সুরা নিসার এই ‘দারাবা’ সংক্রান্ত ৩৪ নং আয়াতটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা এসেছে। সুরা নিসায় ব্যবহৃত ‘দারাবা’ শব্দটির অর্থ ‘পিটানো’, ‘প্রহার’, এমনকি ‘মৃদু আঘাত’ হিসেবেও নেয়ার অবকাশ নেই। আরবী অভিধানে ‘দারাবা’ শব্দটির অনেক অর্থ রয়েছে। সেক্ষেত্রে অন্য সব অর্থ বাদ দিয়ে স্ত্রীর ক্ষেত্রে ‘পিটানো’ বা ‘আঘাত করা’ অর্থটি গ্রহণ করা কতটা যুক্তিযুক্ত, বিশেষ করে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে, তা ভেবে দেখতে হবে।
তাছাড়া কোরআনের ব্যাখ্যা আমাদের গ্রহণ করতে হবে রসুল (সা.)-এর জীবনী থেকে। রসুল (সা.)-এর জীবনে দেখা যায় স্ত্রীদের সঙ্গে বিরোধ বা সমস্যার ক্ষেত্রে তিনি স্ত্রীদের কখনই আঘাত করেননি। বরং দু-দুবার এমন ঘটনায় তিনি একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন, আর তাহলো স্ত্রীদের থেকে দুরে সরে যাওয়া। কাজেই সুন্নাহ অনুযায়ী ‘দারাবা’ শব্দটির অর্থ ‘আঘাত করার’ তুলনায় ‘দূরে সরে যাওয়া’ বা ‘সাময়িক দূরত্ব বজায় রাখা’ বেশি সামঞ্জস্যশীল। স্ত্রী অবৈধ শারীরিক সর্ম্পকের দোষে দুষ্ট হলে সীমিত শারীরিক আঘাতের কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শারীরিক আঘাত প্রযোজ্য নয়।
ইসলামী চিন্তাবিদগণ এ ব্যাপারে একমত যে, নারী ও পুরুষ মানুষ হিসেবে সমান। কেউ উত্তম বা কেউ অধম নয় (৪: ১; ৭: ১৮৯; ৩৩: ৩৫; ৯: ৭১) । শুধুমাত্র নারী বা পুরুষ হবার কারণে কেউ শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করতে পারে না। বরং যে যত বেশি আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালনের ক্ষেত্রে সচেতন, সেই তত উত্তম। আল্লাহ বলেন: “তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তাক্ওয়ার দিক দিয়ে উত্তম” (আল-কোরআন, ৪৯-১৩)। ইসলামের সাধারণ মূলনীতিগুলোর আলোকে মুসলিম পরিবারগুলোর কাঠামোকে বিবেচনায় আনতে হবে।