পথ-প্রদর্শক হিসেবে গেরিলা গার্লসকে সঙ্গে নিয়ে, পাশ্চাত্য শিল্পের দুই হাজার বছর জুড়ে হেসে খেলে বেড়িয়ে আসুন। আবিষ্কার করুন শিল্প ইতিহাসের প্রকৃত ‘কে’, ‘কী’, ‘কখন’, আর ‘কেন’। জাদুঘরগুলোর ধ্রুপদী অংশে কারা ওসব নগ্ন পুরুষকে রেখেছিল? ‘সভ্যতা’ যখন ইউরোপ জুড়ে দুর্বার বেগে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন নারী শিল্পীদের ক্ষেত্রে কী কী বিধি-নিষেধ ছিল? মধ্যযুগে সন্ন্যাসিনীরা কেন অন্য নারীদের চাইতে বেশি আনন্দ-ফূর্তিতে জীবন কাটাতে পারতেন? সরস ও বুদ্ধিদীপ্ত কিন্তু কুশলী ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ এই শিল্পকথা যে ইতিহাসকে—এবং হয়তো কিছু কিছু ইতিহাসবিদকেও—একেবারে হেঁটমুণ্ড-ঊর্ধ্বপদ করে দেবে তা নিশ্চিত। বইটি জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে: তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের ‘বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন’ ধরনের অসংখ্য উদ্ধৃতি; কেজো তথ্য (ভেবে দেখুন, ঊনবিংশ শতাব্দীতে গণিকাদের কত অসংখ্য ছবি আঁকা হয়েছে, অথচ সেই তুলনায় মেয়েদের ভোটাধিকার লাভের জন্য আন্দোলনকারী নারীদের ছবি কত কম); এবং বিখ্যাত সব শিল্পকর্মের ‘বিবর্ধিত’ রিপ্রোডাকশন—ঐতিহাসিক যথার্থতা ও প্রতিশোধের জন্য। ১৯৮৫ সাল থেকে ‘গেরিলা গার্লস’—কিছু নারী শিল্পী ও শিল্পজগতের পেশাদারদের একটি অজ্ঞাতপরিচয় দল—গরিলার মুখোশ, গ্লু ব্রাশ, আর তীব্র শ্লেষাত্মক পোস্টার ব্যবহার করে চলেছে, একথা প্রমাণ করার জন্য যে, হাস্যরস (ও নকল পশম) অশুভের বিরুদ্ধে ভোঁতা-প্রান্ত বিশিষ্ট এক বিরাট অস্ত্র। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউ দলটির প্রথম বই কনফেশন্স অব দ্য গেরিলা গার্লস-কে ‘শিল্প জগতের গোঁড়ামি গুঁড়িয়ে-দেয়া এক অভিযোগনামা’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। বলেছিল, ‘গেরিলা গার্লস-এর কাজ উত্যক্তকারী কথাবার্তাকে চারুশিল্পে উন্নীত করে।’ আর এবারের বইটির মাধ্যমে দলটি সনাতন শিল্প ইতিহাসের একটি তুমুল বিনোদনমূলক কিন্তু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সংশোধনী হাজির করেছে; সেই সঙ্গে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যেসব নারী শিল্পী শিল্প জগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন তাঁদেরকে নিয়ে অকুণ্ঠিত চিত্তে এক আনন্দ উৎসব উদ্যাপন করছে।