আবদুল মান্নান সৈয়দের প্রথম গল্পের বই সত্যের মতাে বদমাশ (১৯৬৮)-কে যে। ক্ষয়িষ্ণু-সমান্তবাদী এবং চূড়ান্ত অর্থে আধুনিকতাবিরােধী পাকিস্তান মেনে নিতে পারেনি তার যথার্থ কারণ আছে। প্রথা ও প্রচলের রাজত্বে সাহিত্য জীবনের শুরু থেকেই মান্নান সৈয়দ প্রথম থেকেই ছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীতবিহারী। আজ এত বছর পর যদি তার তরুণতর বয়সের কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ ইত্যাদির দিকে তাকাই তবে সে সত্য হীরার ন্যায় ঝলমল করবে । ধর্মীয় জাগরণের কলরােলে যখন আমাদের সাহিত্য প্রায়। আমূল আচ্ছাদিত ছিল তখন আবদুল মান্নান। সৈয়দ সপ্তসিন্ধু আর দশদিগন্তের সমস্ত নতুনতাকে নিজের শিল্পকর্মে জারিত করলেন। গল্পও এর ব্যতিক্রম নয়। তার গল্পের বইয়ের মধ্যে আছে – সত্যের মতাে বদমাশ, চলাে যাই পরােক্ষে, মৃত্যুর অধিক লাল ক্ষুধা, উৎসব, মাছ মাংস আর মাসুর্যের রূপকথা, নেকড়ে হায়েনাে আর তিন পরী ইত্যাদি।
বাংলা ছােটগল্পের রবীন্দ্রবাহিত যে ইতিহাস আমাদের জানা আছে সেখানে আবদুল মান্নান সৈয়দের ছােটগল্পকে কেবল এক ধারাবাহিকতা মাত্র বিবেচনা করা চলে না। বরং তার গল্পকে বলা যায় সে ধরনের নক্ষত্র যারা গ্রহচ্যুত হয়েও নিজস্ব ঔজ্জ্বল্যে অভিশপ্ত এবং মহীয়ান। গল্পকার আবদুল মান্নান সৈয়দ বারংবার ভূতপূর্বকে ব্যঙ্গ করেন। ব্যাকরণকে গুঁড়িয়ে দেন। পিঁচুটি পড়া গল্প-গবেষককে বিভ্রান্ত করেন। তার গল্পে উন্মুক্ত রাজপথে নেমে পড়ে জলপরি । চৈত্র আর ভাদ্রের কতগুলাে দিন প্রচণ্ড দাবদাহের শেষে মান্নান সৈয়দীয় গদ্যে সুবাতাস পায়। রােগা গল্পপরিস্থিতির যােজন যােজন দূরে সদা জেগে থাকে ‘আবদুল মান্নান সৈয়দ’ শীর্ষক বাংলা গল্পের টাটকা রক্তভূগােল ।