ফ্ল্যাপে লিখা কথা
সন্জীদা খাতুনের সৃষ্টিশীলতা বহুমুখী ও বিচিত্রগামী; সাহিত্য শিল্পের বহু শাখায় তাঁর বিচরণ। ১৯৪৭-এ ভারত ভাগের মধ্য দিয়ে যে ‘স্বাধীনতা’ এসেছিল সেই মেকি স্বাধীনতার স্বরূপ স্পষ্ট হয়ে উঠল বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে। ক্রমে বোঝা গেল বাঙালির ভাষা সংস্কৃতিকে বিপর্যস্ত করে তাদের গোষ্ঠী পরিচয় ভূলিয়ে শুধু মুসলমান পরিচয়ে তাদের পাকিস্তানি করে তুলবার নীল নক্শা তৈরি করে অগ্রসর হচ্ছে তখনকার শাসকগোষ্ঠী। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে বাঙালি সংস্কৃতিকে অক্ষুণ্ন রাখার প্রস্তুতি শুরু হলো।
শত বাধার মুখে রবীন্দ্র শতবর্ষ উদ্যাপন, ছায়ানট প্রতিষ্ঠা রমনার বটমূলে বর্ষবরণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনকে ঋদ্ধ করার দৃঢ় সংকল্পে মত্ত হলেন কিছু সংস্কৃতিকর্মী। সন্জীদা খাতুন এঁদের মধ্যে অন্যতম। ভাষা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকার কথাও সর্বজনবিদিত।
অধ্যাপনা সূত্রে রবীন্দ্র-নজরুল, ছন্দ্র জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ এবং ধ্বনি ও ছন্দে’র পাঠ বিশ্লেষণ এবং গবেষণায় নিবিষ্ট চিত্তে নিবেদিত সন্জীদা’র সৃষ্টি বিশ্ব বর্ণিল ঋদ্ধ। তাঁর রচনা পাঠে জ্ঞাত হই আমরা জানা বিষয়ের না জানা কথাগুলো। পাঠকমাতেই তাঁর রচনা পাঠে হৃষ্ট হন। প্রখ্যাত সাহিত্যিক দেবেশ রায়ের ভাষায় সন্জীদা দুই বাংলার সেই বিরলতম গায়িকা, যিনি গান না গাইলেও শুধু মনন চর্চার সুবাদেই মান্য হয়ে থাকতেন।
বিষয়ের গভীরতা কখনো সন্জীদার রচনাশৈলীকে দুরূহ ও দুর্বোধ্য করে না । স্বভাবজাত প্রবণতায় তিনি রচনা করেন। নিজস্ব গদ্যশৈলী। বাংলা সাহিত্যে যে ক’জন প্রাবন্ধিকের নিজস্ব গদ্যশৈলী বিদ্যমান তাঁদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সন্জীদা খাতুন অন্যতম। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, গদ্যের মতো গানেও রয়েছে তাঁর নিজস্ব গায়কী।প্রবন্ধ সংগ্রহে সংকলিত হয়েছে লেখিকার সঙ্গীত, সংস্কৃতি, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, ছায়ানট, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সত্যেন্দ্রনাথ প্রভৃতি বিষয়ে লিখিত ঋদ্ধ রচনা সমূহ।