“সংস্কৃতি কথা” বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ
পণ্ডিতেরা সংস্কৃতির বিভিন্নতা নিয়ে বড়াই করতে পারেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা এক ও অবিভাজ্য। আগুন জ্বালানাে আসল কথা; কোন কাঠে আগুন জ্বললাে সেদিকে না তাকালেও চলে। তবু যে আমরা তাকাই তার কারণ অহংপ্রীতি। আমার আনা কাঠে, না অপরের আনা কাঠে আগুন জ্বললাে, খামাখা তা ভেবে আমরা সারা হই এবং নিজেকে সঙ্কুচিত করতে থাকি। সঙ্কোচন যে পীড়ন সে কথা ভুলে যাই, বরং তা নিয়েই এক প্রকার গর্ব অনুভব করি। এই সঙ্কোচনের অপর নাম মানসিক ছুঁৎমার্গ আর মানসিক ছুঁৎমার্গ যে মানসিক মৃত্যু এ কথা সহজেই স্বীকার্য। পরিবেষ্টনের সঙ্গে প্রীতির যােগে যে চিত্তের সমৃদ্ধি তাতেই সংস্কৃতির উৎপত্তি। সুতরাং এখানে সেখানে এক-আধটু রংয়ের পার্থক্য থাকলেও আসল জিনিসটা এক। পরিবেষ্টন : আধার ; প্রেম : তৈল ; চিত্ত : সলতে; আর সমৃদ্ধি বা সংস্কৃতি : আলােক। অতএব কি নামীয় আধারে আলাে জ্বললাে, এ নিয়ে যাঁরা তর্কে প্রবৃত্ত হন, তাঁদের তার্কিক বলা গেলেও প্রেমিক বলা যায় না-আলাের ক্ষুধা বা আলাের প্রীতি তাঁদের জীবনে বড় হয়ে উঠে নি বলে। নামের তারতম্যে আধারের যে বিভিন্নতা, electric lightএর আমদানীতে তা-ও লুপ্ত হতে চলেছে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা আজ অপ্রতিহত আর বিজ্ঞান যে নির্বিশেষ এ সহজ সত্য। জীবনের উপর বিজ্ঞানের প্রভাব ক্রমাগত বেড়ে চলেছে বলে জীবনের অমৃতময় ফল সংস্কৃতিও নির্বিশেষ বা সাধারণ হতে চলেছে। অতএব তাকে স্বাগতম’ বলে অভ্যর্থনা করা উচিত।