“সংস্কৃতি কথা” বইটির শেষের ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ
সংস্কৃতির পূর্বাপর বিশ্লেষণে মােতাহের হােসেন চৌধুরী কোনাে দুঃসাধ্য পথের যাত্রী নন। তাঁর কাছে সংস্কৃতিই জীবন। অর্থাৎ, যত উন্নত সংস্কৃতি তত উন্নত জীবন। যেখানে থাকবে প্রেম, সৌন্দর্য ও আনন্দ। মােতাহের হােসেনের এ বিষয়ক বিস্তারিত চিন্ত-চেতনার পরিচয় আছে তার ‘সংস্কৃতি-কথা’ শীর্ষক বহুখ্যাত প্রবন্ধটিতে। এখানে তিনি বলেছেন একশ্রেণির মানুষ শিক্ষিত, অশিক্ষিত নির্বিশেষে কালচার বা সংস্কৃতি অর্থে সংকীর্ণ চিত্তে কেবল নাচ, গান, সাহিত্য, শিল্প, সিনেমা, থিয়েটার প্রভৃতিতে বিবেচনা করেন। তারা জানতে চেষ্টা করেন না যে, সংস্কৃতি কথাটি আরাে ব্যাপক ও গভীর তাৎপর্য বহন করে। মােতাহের হােসেন মনে করেন, চিত্তগঠনের যাবতীয় উপাদানই সংস্কৃতি। শিল্প-সাহিত্য, সঙ্গীত প্রভৃতিকে তিনি সংস্কৃতির উদ্দেশ্য না বলে উপায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার মতে, সংস্কৃতির উদ্দেশ্য হলাে নিজের মধ্যে একজন ঈশ্বর বা আল্লাহ সৃষ্টি করা। যে অর্থে একজন সংস্কৃতিবান মানুষ অর্থ একজন স্রষ্টা। যিনি স্রষ্টা তিনিই কেবল সংস্কৃতিবান বা কালচার্ড।
মােতাহের হােসেন চৌধুরীর মতে, যারা সাংস্কৃতিবান তাঁদের জীবনে বাইরের কোনাে আদেশ-নিষেধের প্রয়ােজন হয় না। তাঁরা আদেশপন্থী নন-অনুপ্রেরণাপন্থী। এসব বিষয়াদি বিবেচনায় তিনি ঘােষণা করেন, সংস্কৃতি শিক্ষিত, মার্জিত মানুষের ধর্ম। শিক্ষিত মানুষ প্রেম, সৌন্দর্য ও আনন্দের পূজারি-যা তারা গ্রহণ করে সংস্কৃতি থেকে। আর সাধারণ মানুষ বিষয়গুলাে পায় বা সন্ধান কর ধর্মের মধ্যে। তিনি ধর্মকে বাইরে থেকে গ্রহণের ঘােরবিরােধী। কেননা বাইরের ধর্মকে যারা গ্রহণ করে তারা আল্লাকে জীবনপ্রেরণারূপে পায় না, ঠোটের বুলি রূপে পায়।
-অনুপম হায়াৎ