এপারে লালন ওপারে রীন্দ্রনাথ, নদীর নাম গড়াই। নৌকার তলে জল-জলের তলে মাছের খেলা। কেউ দেখেনি দু’জনের সাক্ষাৎবেলা। তবু লালন কী কথা কয়! রবীন্দ্রনাথ তা বুঝে লয়। তিনি ছিন্নপত্রে বলেন, ‘একটি ছোট্ট ডিঙ্গিতে একজন ছোকরা একলা দাঁড় বেয়ে চলেছে, এমন মিষ্টি গলায় গান ধরেছে-গান তার পূর্বে তেমন মিষ্টি কখনো শুনিনি।’ এই হচ্ছে পদ্মা-গড়াই, শিলাইদহ, কুষ্টিয়া অঞ্চলের লালন ফকিরের গান, সুরের টান। একাকী আত্মসাধন ‘নড়েচড়ে হাতের কাছে খুঁজলে জনম ভর মেলেনা।’ দেহতত্ত্বের আর মনস্তত্ত্বের যোগবিয়োগের সাধরীতি লালন গানে মূল। তাই মানুষ হওয়ার সাধনা মানেই মনের সাধনা। মনের সাধনাতেই মন হবে সুদ্ধাচারী। তাঁর গান শুদ্ধ মনের গান। এসব গানে নারীর অধিকার, ধর্ম-সংস্কার, ইহকালের বাসনা, স্বদেশপ্রীতি, জাত-বিরোধী নীতি, ঈশ্বর-প্রর্থনা, গুরুবাদ, নির্লোভ, অসাম্প্রদায়িক ও অহিংস সমাজ গঠনের কথা বলা হয়েছে।