নতুন দিগন্ত আব্দুর রউফ চৌধুরীরর সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক উপন্যাস। উপন্যাসটি তিন খন্ডে বিভক্ত। প্রধানত পাকিস্তানের, বৃহৎ অর্থে ভারত উপমহাদেশের, রাজনীতি ও রাজনীতিতে সক্রিয় প্রধান ব্যক্তিদের অবলম্বনে উপন্যাসটির আখ্যান পরিকল্পিত। সুদূর পাকিস্তান করাচিত থেকেই উপন্যাসের শুরু। সময় ১৯৬৮ থেকে ১৯৬৯ সাল। যে মানুষটি উপন্যাসের প্রথমেই আমাদের সামনে হাজির হয় সে হচ্ছে ভূট্টো। স্ত্রী-আমির, নাহিদা, বেনফরত। বন্ধু- সুরাইয়া, নার্গিস, রোকসানা। ছেলেমেয়ে বেনজির, নাসিমা, মোরতুজা, শাহ নেওয়াজ। আত্মীয় পাতৌদি। ভুট্টো প্রেমিক কিন্তু আস্তে আস্তে তার স্বরূপ উন্মোচিত হয়। লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ভূট্টোর প্রতি পাঠককে বিরূপ করে তোলেন। এই উপন্যাসে আরো সন্ধান পাওয়া যায় একটি বৃহত্তর ‘অখন্ড বাংলাদেশ’ এর; প্রচলিত সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সৃষ্টি। এরই সঙ্গে রাজনৈতিক নেতা আইয়ুব, খুরো, ইন্দিরা, মুজিবের নানারকম স্বরূপ আবিষ্কৃত হয়। ইতিহাসের ধারাবাহিক বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে চাননি লেখক। তিনি বিভিন্ন ঘটনা পরম্পরার মধ্য দিয়ে একই বিষয়ের ঐতিহাসিক পরিণতি তুলে ধরেন। এখানে লেখক উল্লেখ করেছেন সর্বহারা দলের কথা, যার আর এক নাম ‘ওয়ার্কার্স ফ্রেন্ডস ক্লাব’। এ দলের দর্শন এবং মন্ত্র বা গুণ যদি ঠিকমতো কাজে লাগানো যায় তাহলে দেশের ও মানুষের জন্য কি ঘটতে পারে তাই বলার চেষ্টা করেছেন লেখক। সর্বহারা দলের অন্তর্নিহিত গুণাবলীতে তিনি এমনকিচু দেখতে পেয়েছিলেন যা দেশের বৃহত্তর কল্যাণে কাজে লাগানো সম্ভব। এ-দলের একজন নাসিম আহমদ। তার সঙ্গী ফারুখ, মতিন, যতীন। তারা নানারকম কার্যক্রমের ভিতর দিয়ে উপন্যাসটি শেষ না-করা পর্যন্ত পাঠককে স্বস্তি পেতে দেয় না। ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন, কল্পনা এবং স্বপ্ন যুক্ত হয়ে একটি বহুমাত্রিক উপন্যাস তৈরী করেছেন আব্দুর রউফ চৌধুরী।