“শেরে বাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু” বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:
পাকিস্তান ভাংগিয়া দুই টুক্রা হইয়াছে। পূর্বাঞ্চল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রে উন্নীত হইয়াছে। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ বাস্তব সত্য। এইরূপেই সে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও লাভ করিয়াছে। গণতন্ত্রী আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ যে বিশ্বের দরবারে তার যথাযযাগ্য মর্যাদার স্থান দখল করিবে, সে সম্বন্ধে কারও মনে দ্বিধাসন্দেহের অবকাশ নাই। স্বাভাবিকভাবেই এটা ঘটিয়াছে। শেরে-বাংলা ফজলুল হক। ১৯৪০ সালে লাহােরে যা শুধু করিয়াছিলেন, বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে তা সমাপ্ত করিয়াছেন।
এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই পুস্তকে প্রকাশিত প্রবন্ধগুলির ঐতিহাসিক মূল্য ছাড়া আর কোনও দাম নাই। কিন্তু ঐতিহাসিক মূল্য এ সব প্রবন্ধের খুবই আছে। শেরে বাংলা হইতে বংগবন্ধু পর্যন্ত রাজনৈতিক ক্রমবিকাশটা এতে বুঝা যাইবে। তাই নানা দিক হইতে এ-সব প্রবন্ধ আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনায়কদের কাজে লাগিবে। কেন, কিভাবে পাকিস্তানের সৃষ্টি হইয়াছিল, কেনই-বা তা ভাংগিয়া গেল, এটা জানা থাকা খুবই দরকার সকলের জন্যই। কিন্তু বাংলাদেশের জনসাধারণকে সাধারণভাবে এবং রাষ্ট্রনেতা ও বুদ্ধিজীবীদের বিশেষভাবে এ ইতিহাসের খুঁটিনাটিও জানিতে হইবে। স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ফল। এই মুক্তিযুদ্ধ একটা আকস্মিক বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ সংগ্রামের একটা ডায়লেকটিক আছে। এ ঘটনার একটা ধারাবাহিকতা আছে। সে ধারাবাহিকতা ঐতিহাসিক বস্তুবাদে প্রতিষ্ঠিত। সে বস্তুবাদের ঘটনা পরম্পরা মাইলস্টোনের মতই সুস্পষ্ট। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা নিজেই মানুষের জীবনাদর্শ নয়, জীবনাদর্শের উপায় মাত্র। উপায় হিসাবেও রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রাথমিক পদক্ষেপ মাত্র। উপায় হিসাবেও রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রাথমিক পদক্ষেপ মাত্র। প্রাথমিক হইলেও এটা অপরিহার্য পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপকে নির্ভুল করিতে হইলে, মানে আমাদের স্বাধীনতাকে সফল করিতে হইলে, আমাদের গতিপথে যেমন সামনে ঊর্ধ্বে নযর রাখিতে হইবে, তেমনই পিছন ফিরিয়া দেখিতে হইবে এবং পায়ের নিচে তাকাইতে হইবে। চাকা-ঘােরার মতই এই উভয় কাজই অগ্রগতির অবিচ্ছিন্ন অংশ। আমাদের নবলব্ধ আযাদি অতীত সগ্রামসমূহের সমষ্টিগত ফল। তাই আমাদের সগ্রামের বিভিন্ন স্তরের মর্মার্থ উপলব্ধি করিতে হইবে।