ফ্ল্যাপে লিখা কথা
পালাবদলের ইতিকথায় সাম্প্রতিককালে বহুল আলোচিত সংস্কার কার্যধারা একটি তৎপর্যপূর্ণ অধীত বিষয়। এবং সংস্কার কার্যধারার পটভূমি বর্ণিত হয়েছে দুর্নীতির নীতিপত্রে। দুর্নীতির কারণ হিসেবে রাজনীতিবিদদের ভোগবাদী মানসিকতাকে দায়ী করেন সমাজতাত্ত্বিকরা। একই ধারাবাহিকতায় মানবাধিকার হয়েছে ভূ-লুণ্ঠিত। জনজবাবদিহিতা ছাড়াই বেড়েছে পুলিশের পরাক্রম। তকদীর ফেরাবার চেষ্টার বৃথাই তদবীর করে বঞ্চিত হয়েছে সাধারণ মানুষ। তাদের ঐ নিরন্তর চেষ্টাই প্রমাণ করেছে ‘ভাল মানুষের ভাত নাই’। সেখানে শুধুই তোষামোদী চাটুকারের রাজত্ব। বুদ্ধিজীবীরা কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক ভূমিকা পালনে ব্যর্থ।
এক সময়ে খোদ রাষ্ট্রব্যবস্থার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। সব সময় সাধারণ মানুষের ন্যূনতম প্রার্থনা থেকেছে ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’। ভাগ্য ফেরাবার উপায় অন্বেষণে নির্বাচনের মাধ্যম পরিবর্তন প্রয়াসী হয়েছে মানুষ। নতুন সরকার সবকিছু অতিক্রম করে ‘নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ গড়ার প্রত্যয়ে ব্যক্ত করেছে দৃঢ় অঙ্গীকার। এ সবকিছুই বাঙময় হয়ে উঠেছে সৃজনশীল এক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মূর্ত এবং বিমূর্ত ব্যঞ্জনায় উপস্থাপিত প্রবন্ধমালায় : সংকলিত এ গ্রন্থে।
ভূমিকা
বাংলাদেশের ইতিহাস পালাবদলের ইতিহাস। প্রাক-ঐতিহাসিক আমল থেকে একটি স্বকীয় সত্ত্বার জন্য চিরসংগ্রামশীল ‘সংশপ্তক’ এই জনগোষ্ঠী। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মানচিত্রে সমাজ পরিবর্তনের অনেক বাঁক অতিক্রম সত্ত্বেও অর্জিথ হয়নি অভীষ্ট লক্ষ্য। এখানো ‘এখানে মৃত্যু হানা দেয় বার বার, লোক চক্ষুর আড়ালে জমেছে অন্ধকার’। দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং দারিদ্র্য বাসা বেঁধেছে ‘এই গ্রাম নগরীর ভীড়ে’। তার মাঝে কখনো কখনো ‘শুকনো পাতায় আগুন জ্বলে।’ এক একটি ঊনসত্তর, একাত্তর, নব্বই আমাদের জাতিকে জাগ্রত করে। উত্তরণ উপায় অন্বেষণে ব্রতি হয় জাতি। রাজনীতিবিদরা জনতাকে উদ্বেলিত করে। সিভিল সোসাইটি সংস্কারের কথা বলে। বুদ্ধিজীবিরা যথার্থ নির্দেশনা প্রয়াসী হয়। এভঅবে ‘ট্রায়াল এন্ড এরর’- প্রয়াস এবং প্রতীতির মাঝে অগ্রসরমান এই জাতি।
আমাদের সমস্যা আছে। সংকট আছে। আছে সংলাপ-সংস্কার অবশেষে ‘নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ নির্মাণের প্রত্যয়। মিত্র আছে। অর্জনকে বর্জনের অপকৌশল আছে। অকার্যকারিতার বিপরীতে কার্যকারিতার উপযোগ আছে। সর্বোপরি ‘অসমাপ্ত বিপ্লব’ অসমাপ্ত সংস্কারের’ গণসমাপ্তি, গণসংস্কার আছে।
বিগত বছরগুলোতে পালাবদলের, দিনবদলের এ প্রয়াস বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে সতত প্রবহমান ছিল। এই গ্রন্থনা ঐ ধারাবাহিকতারই ইতিকথা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন সজাগ শিক্ষার্থী হিসেবে বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সমাহার এই গ্রথিত প্রবন্ধাবলী। সময়ান্তরে সবগুলোই জাতীয় সংবাদপত্রসমূহে বিশেষত : দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত। সময় অনেক কিছু বদলে দেয়। তবুও সময়ের সাক্ষী হিসেবেই উপস্থাপিত প্রবন্ধমালা হয়তো বিবেচিত হবে। ভুল-ত্রুটি, অক্ষমতা, সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্রে ক্ষমাসুন্দর চোখই কাঙ্ক্ষিত।
এই গ্রন্থটি সম্মিলিত সৃষ্টি। আমি আমার বর্তমান এবং নিকট অতীতের সকল সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমার পরিবারের সদস্য : ফারাহ ইয়াসমীন মিতু, মেহেদী হাসান রনি, সারোয়ার হাসান, নিয়াজ আহমেদ ইমরান-সকলেই স্ব স্ব ভূমিকা যথাযথভাবেই পালন করেছে। সহধর্মিনী দীনা আশরাফীসোহেলীর নিরন্তর অনুপ্রেরণা সকল বিপত্তিকে অগ্রাহ্য করেছে। গ্রন্থটির বিবেচনা, সম্পাদনা ও প্রাসঙ্গিক কাজগুলো করেছে আমার প্রিয়মুখ আবুল বাশার খান। প্রকাশনার আয়োজন করেছে অপর প্রিয় ছাত্রদ্বয় মো. হাসিবুর রহমান রিপন এবং মো. আবু সালেহ মুসা। তাদের জন্য দোয়া আশীর্বাদ। এই দুর্দিনে প্রকাশনার সদয় দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রান্ত প্রকাশনীর জনাব আমিনুর রহমানকে জানাই কৃতজ্ঞতা।
ড. আবদুল লতিফ মাসুম
সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সাভার, ঢাকা।
০১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯
সূচি
* নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি
* দুর্নীতির নীতিপত্র
* অসমাপ্ত রাজনৈতিক সংস্কার
* অকার্যকর রাষ্ট্রতত্ত্ব এবং কার্যকর বিধিব্যবস্থা
* তদরীর সংস্কৃতি এবং তকদীর বঞ্চিত মানুষ
* জাতীয় নিরাপত্তা : উত্তরণ কৌশল
* বিশ শতকে বাংলাদেশের সমাজ পরিবর্তনের প্রকৃতি
* রাজনীতিকদের ভোগবাদী মানসিকতা
* মানবাধিকার তত্ত্বকথা ও দেশজ প্রেক্ষিত
* পুলিশের পরাক্রম এবং জন জবাবদিহিতা
* রাজনীতিতে বিরোধীদলের প্রত্যাশিত ভূমিকা
* তোষামোদ চাটুকার ও রাজনীতি
* সমস্যা-সংকট-সংলাপ
* বুদ্ধিজীবীদের রাজনৈতিক ভূমিকা
* পরিবর্তনের উপায় : একমাত্র নির্বাচন
* বাংলাদেশ জাতিসত্তার পুনর্গঠন
* রাজনীতিতে ন্যক্কারজনক ব্যক্তিপ্রাধান্য
* ভাল মানুষের ভাত নাই
* আন্দোলন এবং বিরোধীদলের নিয়মতান্ত্রিক ভূমিকা
* প্রজন্ম কথা : নীতিদর্শনের প্রায়োগিকতা