এক বিশাল গৌরবময় জীবনের পথ-পরিক্রমার কাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে তথ্যে সজীব, রসে স্বাদু ও বৈঠকী মেজাজে পূর্ণ এই বই। এর লেখক আর কেউ নন, স্বয়ং সুকুমার সেন। মনস্বী ও যশস্বী ভাষাতত্ত্ববিদ সুকুমার সেন ছিলেন নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। জীবনভর নিজের বিদ্যাচর্চার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছাত্রদের গবেষণায় উৎসাহিত করেছেন। জাগ্রত করেছেন তাদের কৌতূহল। তিনি ছিলেন বাঙালির মনন-জগতের অন্যতম দিশারী। এই আত্মকথায় তিনি শুনিয়েছেন প্রায় শতাব্দীব্যাপী তার জীবনের প্রতিটি পর্বের কথা তার নিজের ভাষায়, “ব্যক্তি মানুষ, নির্দিষ্ট সংসার, তাকে ঘিরে যে প্রতিবেশ ও সমাজ তারই ছবি তােলা আমার উদ্দেশ্য।” তার দেখা, জানা অনেক মানুষ (এমনকী দু-চারটি জীবজন্তুও) এবং বহু-পরিচিত, স্বল্প-পরিচিত, ক্ষণ-পরিচিত ও অ-পরিচিত যাঁরা তাঁর মনুকে কেবল স্পর্শই করেননি, গভীরভাবে নাড়া দিয়েছেন, তাদের সকলের কথাকে একটি মালার মতাে গেঁথে তিনি বন্দনা করেছেন ‘মহাজীবন’কে। আবার শুধু তার আত্মজীবনই নয়, আমাদের সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং শিক্ষা পরিবেশের একটি ব্যাপ্ত এবং জীবন্ত চলচ্চিত্রও এই সূত্রে উন্মােচিত হয়েছে এই গ্রন্থে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তরঙ্গ। ইতিহাসের সূত্রে তিনি অকপটে জানিয়েছেন নিজের সারস্বতচর্চা, সম্মান, খ্যাতি, সম্মিলন, আনন্দ-সংঘাত, অভিমান, অভিযােগ—সব কিছুই। ইতিপূর্বে প্রকাশিত দুটি পর্বের সঙ্গে যে-অংশ তিনি লিখতে শুরু করলেও সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি, সেই অংশটি নিয়ে লেখকের জন্মশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত হল ‘দিনের পরে দিন যে গেল’-র এই অখণ্ড সংস্করণ।