বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে সভ্যতা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রে অবস্থানের প্রবল দাবি নিয়ে নারীর অস্তিত্ব ও অবস্থান জিজ্ঞাস্য হয়ে উঠেছে। নারীও এখন তার সামাজিক পরিমূল্য বুঝে নিতে চাইছে। এসূত্রে অতীতকে পাঠের আবশ্যকতা খুব বেশি, কেননা ইতিহাসচেতনা ছাড়া মানুষ নিজের পরিসর খুঁজে পায় না, সত্তাসন্ধানী হতে পারে না। ভারতীয় ইতিহাস-জীবনে নারীর অবস্থান কোথায় ও কেমন ছিল তার রূপ এটি অনুধাবন করার দায়বোধে গ্রন্থটি রচিত। প্রাচীন ভারতীয় সমাজ-রাষ্ট্রীয় শক্তিবর্গ শাস্ত্রকথার নানা বাঁধনে নারীর দেহ ও আত্মাকে কীভাবে বদ্ধ করে রেখেছিল, উর্দ্ধতন অবস্থান থেকে তারা কীভাবে নারীকে অধস্তন করে শাসন ও শোষণ করেছিল তারই অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণে সমৃদ্ধ সিরাজ সালেকীনের ভারতীয় শাস্ত্রে নারীকথা। মনুসংহিতা, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, চাণক্য-কথা, জাতক, থেরিগাথা, পঞ্চতন্ত্র, হিতোপদেশ-এসব শাস্ত্রের বিষয়বস্তু কমবেশি কাছাকাছি-কারণ দীর্ঘকাল এদেশের সমাজবিধি ছিল একই অর্থকাঠামো ও শাসনযন্ত্রের মধ্যে আবর্তিত, তাই নারীকে দমন ও পীড়নের ক্ষেত্রগুলো ও ধরনধারণও ছিল একইরকম। তৎকালীন ভারতীয় সমাজকাঠামো প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্তসমেত গ্রন্থটির অনুসন্ধেয় হওয়ায় পাঠক পেয়ে যান ইতিহাসের দীর্ঘ পরিপ্রেক্ষিত এবং একইসঙ্গে বুঝে নিতে পারেন নারীশোষণের গোপন-প্রকাশ অন্ধিসন্ধিগুলোকেও। আর অর্জন করেন সেই বোধ যা দিয়ে সম্ভব হতে পারে শুভ সমাজ ও বৈষম্যহীন পরিমণ্ডল রচনার জন্য বাস্তবকে বিনির্মাণ। ইতিহাসের এই অর্জন আর আজকের নারীমুক্তির বার্তা বোঝার জন্যও এ গ্রন্থের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। -বেগম আকতর কামাল।