শী রিটার্ন অভ শী

৳ 169.00

লেখক হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড
প্রকাশক সেবা প্রকাশনী
আইএসবিএন
(ISBN)
9841632330
ভাষা বাংলা
পৃষ্ঠার সংখ্যা ৩৪৪
সংস্কার 1st, 2014
দেশ বাংলাদেশ

শুরুর আগে
প্রথমেই পাঠকদের একটা কথা বলে নিতে চাই, যে অবিশ্বাস্য ইতিহাস আপনাদের শোনাতে যাচ্ছি, তার লেখক আমি নই-আমি সম্পাদক মাত্র। কি করে জানতে পারলাম এ ইতিহাস, তা যদি বলি , খচ খচ করতে থাকবে আমার মনের ভেতর -বুঝি পাঠকরা প্রতারক ভাবলেন আমাকে।

কয়েক বছর আগের কথা। কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয় -ধরুন কেম্‌ব্রিজে (আসল নামটা গোপন রাখছি) নিজের কিছু কাজ উপলক্ষে এক বন্ধুর বাসায় কিছুদিন থাকতে হয়েছিল। সে সময় একদিন বন্ধুর সাথে হাঁটছি রাস্তা দিয়ে। এমন সময় দেখি, দুজন লোক হাত ধরাধরি করে আসছে।এরকম তো কত লোকই যায় আসে, কিন্তু ওদের কথা বিশেষভাবে আমার মনে গেঁথে গেল। কারণ ওদের একজন অসম্ভব সুপুরুষ। নির্দ্বিধায় বলতে পারি, জীবনে অমন সুপুরুষ আমি কখনো দেখিনি, সম্ভবত আর দেখবোও না। যেমন লম্বা তেমনি চওড়া। বুনো মর্দা হরিণের মাঝে যেমন দেখা যায়, অনেকটা তেমন অদ্ভুত এক শক্তি আর মহিমার আভাস তার চোখে -মুখে। অপূর্ব সুন্দর চেহারা, নিখুঁত-নিভাঁজ মুখের ত্বক। হেঁটে যাওয়া এক মেয়েকে যখন টুপি খুলে অভিবাদন জানালো, দেখলাম ছোট ছোট কোঁকড়া সোনালি চুলে ছাওয়া তার মাথা।

‘কি চেহারা, দেখেছো!’ বন্ধুকে বললাম আমি। ‘সাক্ষাৎ অ্যাপোলোর মূর্তি, যেন প্রাণ পেয়ে নেমে এসেছে মর্তে!’
‘হ্যাঁ, জবাব দিলো বন্ধু। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে সুপুরুষ ব্যক্তির স্বভাব চরিত্রও সেরকম। সবাই ওকে ‘গ্রীক দেবতা’ বলে। আর অন্যজনের দিকে তাকাও, ও হলো ভিনসির (দেবতার নাম এটা) অভিভাবক-দুনিয়ায় যাবতীয় বিষয়ে পণ্ডিত, চলন্ত বিশ্বকোষ বলতে পারো, কিন্তু চেহারা দেখ-ঠিক উল্টো।’

সত্যিই তাই, ভিনসি যেমন সুপুরুষ এই লোকটা ঠিক তেমন কদাকার। বছর চল্লিশেক হবে বয়েস।ছোট ছোট পাগুলো বাইরের দিকে বাঁকানো ধনুকের মতো, চাপা বুক, শরীরের তুলনায় অস্বাভাবিক লম্বা হাত। কালো চুল লোকটার মাথায়, কুতকুত চোখ, কপালেও চল গজিয়েছে তার , আর গাল ভর্তি দাড়ি উঠে গেছে চুল পর্যন্ত। একমাত্র গরিলার সাথেই তুলনা করা যেতে পারে এ চেহারার। বন্ধুকে বললাম, ‘লোকটার সাথে পরিচিত হতে চাই আমি’।

‘ঠিক আছে,’ জবাব দিলো বন্ধু, ‘আমি চিনি ভিনসিকে, এক্ষুণি আলাপ করিয়ে দোবো তোমার সাথে।’
আলাপ হলো। কিছুদিন আগে আফ্রিকায় এ অভিযান শেষে ফিরেছি আমি। সে সম্পর্কে কথা বললাম কয়েক মিনিট। এমন সময় মোটাসোটা এক মহিলা এগিয়ে এলো আমাদের দিকে, সঙ্গে সুন্দরী একটা মেয়ে। সম্ভবত আগে থেকেই ওদের সাথে পরিচয় আছে ভিনসির, কারণ ওদের দেখেই ও এগিয়ে গেল আলাপ করার জন্য।

আর বয়স্ক লোকটা মুখের ভাব বদলে গেল সঙ্গে সঙ্গে। ইতিমধ্যে তার নাম জেনে ফেলেছি-হলি। আচমকা আলাপ থামিয়ে দিল সে। আমার দিকে তাকিয়ে সামান্য মাথা ঝুঁকিয়ে হেঁটে চলে গেল ত্রস্ত ভঙ্গিতে। বন্ধু জানালেন, বেশির ভাগ মানুষ পাগলা কুকুরকে যতখানি ভয় পায় ঐ লোকটা মেয়ে মানুষকেও ঠিক ততখানিই ভয় পায়।

যা হোক, সেদিন রাতেই আমি কেম্‌ব্রিজ থেকে চলে এলাম। এবং ঐ ই আমার শেষ দেখা ভিনসি এবং হলির সাথে। প্রায় ভুলতে বসেছিলাম ওদের কথা, এমন সময় মাসখানেক আগে একটা চিঠি আর দুটো প্যাকেট এসে হাজির আমার ঠিকানায়। চিঠিটা খুলে দেখলাম, লেখকের নাম ‘হোরেস হলি’ । তাতে লেখা :
‘-কলেজ,কেম্‌ব্রিজ, মে-১৮-’

‘প্রীতিভাজনেষু,
‘এ চিঠি পেয়ে সম্ভবত আপনি আশ্চর্য হবেন। এত কম সময়ের জন্যে আমাদের আলাপ হয়েছিল যে, আমার কথা আপনার মনে না থাকাই স্বাভাবিক। সুতরাং আগে পরিচয়টা দিয়ে নেয়াই বোধহয় ভালো । বেশ ক’বছর আগে আমি এবং আমার পালিত পুত্র লিও ভিনসির সাথে আপনার আলাপ হয়েছিল, কেম্‌ব্রিজের এক পথে। এবার আশা করি চিনতে পেরেছেন।

‘ভূমিকা দীর্ঘ না করে কাজের কথায় আসি। সম্প্রতি মধ্য আফ্রিকায় এক অভিযানের বর্ণনা দিয়ে লেখা আপনার একটা বই পড়লাম। বেশ কৌতূহল নিয়েই পড়লাম। আমার ধারণা, ওদে আপনি যা যা বলেছেন তা আংশিকভাবে সত্যি আর আংশিক আপনি কল্পনার রং চড়িয়ে রচনা করেছেন।যা হোক , আপনার ঐ বইটা পড়ার পরই আমার মাথায় বুদ্ধিটা আসে। আমার অভিজ্ঞতা আমি লিখে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই( এই চিঠির সাথে পাণ্ডুলিপিটা পাঠাচ্ছি আপনার কাছে)। আমি এবং আমার পালিত পুত্র লিও ভিনসি সম্প্রতি এক অভিযানে আফ্রিকা গিয়েছিলাম। ঐ সময় আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা আপনার বইয়ের বর্ণনার চেয়ে অনেক অনেক বেশি চমকপ্রদ। সত্যি কথা বলতে কি, জিনিসটা আপানর কাছে পাঠতে আমি সঙ্কোচ বোধ করছি-পাছে আপনি অবিশ্বাস করেন আমার গল্পটা। এই ভয়েই আমি-বলা ভালো আমরা, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ,আমাদের জীবনকালে আামদের ঐ অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করবো না। কিন্তু কদিন আগে এমন একটা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে যে ,আমার মত না বদলে পারলাম না। পাণ্ডুলিপিটা পড়া শেষ হলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন ।হ্যাঁ, আবার আমরা রওনা হচ্ছি। এবার মধ্য এশিয়ার দিকে। এবার হয়তো আরো বেশি দিন দেশের বাইরে থাকতে হবে, হয়তো কোনদিনই ফিরে আসা হবে না। সুতরাং যে অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা আমরা অর্জন করেছি দুনিয়ার মানুষকে তা ভাগ দেবো না কেন? জানি, মানুষ অবিশ্বাস করতে পারে, গালগল্প মনে করতে পারে, তবু ঘটনাটা প্রকাশ করা দায়িত্ব মনে হয়েছে আমাদের কাছে। লিও আর আমি অনেক আলোচনার পর পাণ্ডুলিপিটা আপনার কাছেই পাঠনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনার হাতে পুরো কর্তৃত্ব থাকছে, যোগ্য মনে হলে এটা প্রকাশ করবেন, অযোগ্য মনে হলে করবেন না। কেবল একটা অনুরোধ, আমাদের আসল নামগুলো গোপন রাখবেন।

‘বিশেষ আর কি? সত্যি বলছি, যা যা ঘটেছিলো শুধুমাত্র তা-ই লিখেছি পাণ্ডুলিপিতে, কোনো ঘটনাই বিন্দুমাত্র অতিরঞ্জিত করিনি। ‘সে’ সম্পর্কে বলতে পারি, যা লিখেছি তার চেয়ে বেশি কিছু আমরা জানতে পারিনি। কে সে? কোর- এর গুহায় কোত্থেকে , কিভাবে সে এসেছিলো, কি তার ধর্ম? কিছুই আমরা জানতে পারিনি, সম্ভবত পারবোও না কোনোদিন। ‘কাজটা নেবেন আপনি? আপনার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। বিনিময়ে , আমাদের ধারণা,চমকপ্রদ এক ইতিহাস পৃথিবীর সামনে উপস্থিত করার গৌরব আপনি অর্জন করবেন। দয়া করে পাণ্ডুলিপিটা পড়বেন, এবং আপনার সিদ্ধান্ত জানাবেন।
‘বিশ্বাস করুন, আপনার একান্ত বিশ্বস্ত,
‘এল, হোরেস হলি’।

‘পুনশ্চ : পাণ্ডুলিপিটা প্রকাশ করার পর যদি মুনাফা হয়, সে টাকা দিয়ে আপনার যা ইচ্ছে তাই করতে পারবেন। আর যদি ক্ষতি হয়, আমার আইনজ্ঞ-মেসার্স জিওফ্রে অ্যাণ্ড জর্ডান-এর প্রতি নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি, ওরা পুষিয়ে দেবে। যতদিন না আমরা দাবি করছি ততদিন পোড়ামাটির ফলক, গোলমোহর এবং পার্চমেন্টগুলো আপনার কাছেই থাকবে।
-এল, এইচ, এইচ.

চিঠিটা পড়ে বেশ অবাক হলাম। কিন্তু পাণ্ডুলিপিটা যখন শেষ করলাম তখন শুধু অবাক বললে ভুল হবে, রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আমার ধারণা, পাঠকরাও হবেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি ওটা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিলাম, এবং সেকথা লিখে জানালাম মিস্টার হলিকে। জবাব এলো এক সপ্তাহ পর। তবে মিস্টার হলির কাছ থেকে নয়, তার আইনজ্ঞদের কাছ থেকে। তাঁরা জানালেন , তাঁদের মক্কেল এবং মিস্টার লিও ভিনসি ইতিমধ্যে রওনা হয়ে গেছেন তিব্বতের পথে।

এ-ই আমার বক্তব্য, বাকিটা পাঠকরা বিচার করবেন। গৌণ দু-একটা বিষয়ে সামান্য পরিবর্তন ছাড়া পাণ্ডুলিপিটার সম্পূর্ণ তুলে দিলাম আপনাদের জন্যে। আয়শা এবং কোর এর গুহাগুলোর রহস্য উন্মোচনের দায়িত্ব থাকলো আপনাদেরই ওপর।
-সম্পাদক

*লেখকের অনুরোধে আসল নাম বদলে দেয়া হয়েছে।
-সম্পাদক

ভাইয়ের সাথে বাজি ধরে অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী লেখা শুরু করার পর যিনি শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা দুঃসাহসিক ও রোমাঞ্চকর গল্পের স্রষ্টা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন তিনি হলেন স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড। কম বয়সে চাকরিসূত্রে তিনি আফ্রিকা চলে যান এবং সে অঞ্চলের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান, যার ফলে আফ্রিকা মহাদেশের নানা জানা-অজানা বিষয় সম্পর্কে তিনি প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেন এবং এই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে ব্যবহার করেন তার রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস ও গল্পসমূহ রচনায়। দশ ভাই-বোনের মধ্যে অষ্টম হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড জন্মগ্রহণ করেন ১৮৫৬ সালের ২২ জুন, ইংল্যান্ডের নরফোকে। খুব অল্প বয়সেই কর্মজীবন শুরু হয়ে যায় পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে। মাত্র উনিশ বছর বয়সেই তাঁকে চাকরিসূত্রে পাড়ি জমাতে হয় আফ্রিকায়। সেখান থেকে ৬ বছর পর ফিরে এসে তিনি আইনশাস্ত্রে পড়াশোনা শুরুর পাশাপাশি সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন এবং তাঁর জাদুকরী লেখনীর মাধ্যমে সৃষ্টি হতে থাকে 'সলোমন'স মাইনস্', 'শী', 'অ্যালান কোয়াটারমেইন' এর মতো অমর সকল দুঃসাহসিক ও রোমাঞ্চকর কাহিনীর। হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর বই সমূহ যুগে যুগে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পাঠকদের দিয়ে গিয়েছে নানা বিচিত্র কল্পকাহিনীর এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যার মূলে রয়েছে 'আমস্লোপোগাস', 'রিলিজিয়ন', 'অ্যালান কোয়াটারমেইন', 'শী' ইত্যাদি বিখ্যাত সিরিজ। হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'ক্লিওপেট্রা', 'মন্টেজুমা'স ডটার', 'লিসবেথ', 'কুইন অফ দ্য ডন', 'ভার্জিন অফ দ্য সান', 'দ্য ঘোস্ট কিংস', 'মেরি', 'দ্য ট্রেজার অফ দ্য লেক', 'রেড ইভ' ইত্যাদিও উল্লেখযোগ্য। তাঁর বেশ কিছু বই বাংলাদেশি পাঠকদের সুবিধার জন্য অনূদিত হয়েছে বাংলা ভাষায়। বাংলা ভাষায় অনূদিত হেনরি রাইডার হ্যগার্ড এর অনুবাদ বই এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'শী', 'রিটার্ন অফ শী', 'দ্য ইয়েলো গড', 'দ্য ঘোস্ট কিংস', 'কিং সলোমন'স মাইনস', 'মন্টেজুমা'স ডটার', 'অ্যালান অ্যান্ড দ্য হোলি ফ্লাওয়ার', 'মার্গারেট', 'দ্য পিপল অফ দ্য মিস্ট' ইত্যাদি। এই খ্যাতিমান কাহিনীকার ১৯২৫ সালের ১৪ মে ৬৮ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। এর পূর্বে তিনি ১৯১২ সালে ইংরেজ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে 'নাইটহুড' উপাধি লাভ করেন।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন →
বই সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা বা মতামত থাকলে আমাদেরকে জানান
শেয়ার করুন

লেখকের অন্য বইসমূহ

প্রকাশকের অন্য বইসমূহ