“কলেজ স্ট্রীটে সত্তর বছর- ২য় পার্ট”বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা :
যদিও আমাদের পৈতৃক বাড়ি ঢাকুরিয়ায়, আমাদের মনে হত কলেজ স্ট্রীটই আমাদের আদত ঠিকানা। কারণ মিত্র ও ঘােষ-এর অবস্থান সেখানে এবং এই প্রতিষ্ঠানই ছিল আমাদের বাড়ির তথা পরিবারের স্নায়ুকেন্দ্র। বইয়ের গন্ধে বাড়ি ছিল ভরপুর। বইমেলার উত্তেজনা আমাদের শিশুকাল থেকে আবিষ্ট করে রাখত। জন্মের পর থেকেই শুনেছি মিত্র ও ঘােষের গােড়াপত্তনের ইতিহাস। শুনেছি আমার সাহিত্যিক দাদু গজেন্দ্রকুমার মিত্র-র ত্যাগ, পরিশ্রম আর স্বপ্নের গড়ে ওঠার কাহিনী। বাবার মুখে শুনতাম আমার সদ্য গড়ে ওঠা জগতের কিংবদন্তীদের গল্প। গােগ্রাসে গলাধঃকরণ করতাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কবিশেখর কালিদাস রায়, প্রবােধকুমার সান্যাল-দের ইতিহাস। মনে হত—ইস্ . আর-কটা বছর আগে যদি জন্মাতাম। বাবাকে বহুবছর ধরে বলেছি তার অভিজ্ঞতার কথা লিপিবদ্ধ করতে। কিন্তু আমার প্রকাশক বাবার লেখক হয়ে ওঠা আর হয়নি। হয়তাে বা নানান পারিপার্শ্বিক চাপও তাঁকে বাধা দিয়েছে। আজ এতদিন পরে বাবা যে কলম ধরতে রাজী হয়েছেন তাতে আমরা অর্থাৎ আমাদের পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য এক কথায় অভিভূত। | সুদূর প্রবাসে থাকার জন্য এই বইটির জন্ম সময়ে আমি থাকতে পারব না এই আফছোসটা গ্রহণ করা কষ্টসাধ্য। নতুন বইটির সুমিষ্ট ঘ্রাণ নিতে নিতেই সেই কষ্টকে ভুলতে হবে আর-কি। আমার বিশ্বাস বাবার স্বভাবসিদ্ধ সরল, প্রাণােচ্ছল বাকভঙ্গিমা তার ঘনিষ্ঠদের ছাড়াও বাংলার পাঠককুলকেও আকৃষ্ট করবে। যদি এই বইটি বাংলা পাঠকদের কিছু অংশকেও মুগ্ধ করতে পারে তাহলে সেটি হবে আমার প্রৌঢ় বাবার একনিষ্ঠ এবং দীর্ঘকালীন সাহিত্যসাধনার সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার।