“ভারত যখন স্বাধীন হচ্ছিল :ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডমধ:
দুবছরের কিছু বেশি আগে আত্মজীবনী লেখার অনুরােধ নিয়ে আমি মাওলানা আজাদের কাছে যাই। এক মুহূর্তের জন্যও তখন আমার মনে হয়নি যে, সে বইয়ের ভূমিকা লেখার দুঃখময় ভার আমাকেই বইতে হবে। নিজের ব্যক্তিজীবন নিয়ে কিছু বলা তিনি পছন্দ করতেন না এবং গােড়ার দিকে এ কাজ হাতে নিতে তিনি অনিচ্ছুক ছিলেন। ব্রিটিশের হাত থেকে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে তাঁর অন্যতম প্রধান ভূমিকা; সুতরাং ইতিহাসের সেই স্মরণীয় অধ্যায় সম্পর্কে তার বিবরণ উত্তরপুরুষদের জন্য লিপিবদ্ধ করা কর্তব্য-এ কথা অনেক কষ্টে তাঁকে বােঝানাে গিয়েছিল। ভগ্নস্বাস্থ্যও ছিল তাঁর অনিচ্ছার আংশিক কারণ। তিনি মনে করতেন, তাঁর ওপর ন্যস্ত রাজনৈতিক আর প্রশাসনিক গুরুদায়িত্ব পালন করা ছাড়া গত্যন্তর নেই এবং তা করতে গেলে তাঁকে অবশ্যই সর্বশক্তি নিয়ােগ করতে হবে। যখন তাঁকে এই আশ্বাস দিলাম যে, আমার সাধ্যে যতটা কুলােয় তাঁকে আমি হাতে-কলমে লেখার দায় থেকে রেহাই দেব, তখন শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হলেন। অবশ্য এর ফল দাঁড়াবে এই যে, ভারতবাসী তার নিজের ভাষায় লেখা আত্মজীবনী পড়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। এর দরুন সাধারণভাবে ভারতীয় সাহিত্য আর বিশেষভাবে উর্দু অপুষ্ট থেকে যাবে। তবু তাঁর কথানুযায়ী লেখা ইংরেজি বয়ানটি কানা মামা হলেও নেই মামার চেয়ে বরং ভালাে।
এই বই কীভাবে রচিত হয়েছে, সেটা কিছুটা বিশদভাবে এখানে বলা দরকার বলে আমি মনে করি। মাঝে মাঝে আমাকে যখন দিল্লির বাইরে যেতে হয়েছে, সেই সময়গুলাে বাদ দিলে বিগত বছর দুই প্রতি সন্ধ্যায় গড়ে এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় আমি মাওলানা আজাদের সঙ্গে কাটিয়েছি। আজাদের ছিল আলাপচারীর আশ্চর্য ক্ষমতা; নিজের অভিজ্ঞতাগুলাে বর্ণনার গুণে তিনি প্রাণবন্ত করে তুলতেন। আমি সুপ্রতুল নােট নিতাম এবং সেই সঙ্গে কোথাও ঠেকলে খােলাসা করার জন্য অথবা আরও তথ্য পাওয়ার জন্য প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতাম। নিজের বিষয়ে বলতে বরাবরই তিনি অস্বীকার করেছেন, কিন্তু জনস্বার্থ সংক্রান্ত ব্যাপারে তিনি রাখঢাক না করে মনের কথা খুলে বলেছেন। যখন একটা অধ্যায় লেখার মতন মালমসলা জমেছে, তখন আমি তা থেকে ইংরেজিতে খসড়া করে সুযােগ পাওয়ামাত্র তাঁকে তৎক্ষণাৎ দেখতে দিয়েছি। প্রত্যেকটি অধ্যায় তিনি নিজে পড়ার পর আমরা একসঙ্গে তা নিয়ে বসেছি। এই স্তরে তিনি পরিবর্ধন, পরিবর্তন আর পরিবর্জন মারফত সে লেখার অনেক সংশােধন করেছেন।