“কদাচিৎ কুত্রাপি” বইটি সর্ম্পকে কিছু কথাঃ
‘কাঁচের সাগর যত কাঁটাবনে বাসা
মাছের নাগর কত পাটাতনে ঠাসা’
উপরের চরণের সাথে নিচের চরণের এমন শব্দেশব্দে মিলিয়ে দেওয়া যেমন আছে, তেমনি কোথাও কোথাও পাওয়া যাবে প্রকৃত গদ্যের চালচলন। ‘কুত্রাপি ছন্দ’ এভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দৃঢ়ভাবে বাঁধা। আলগা হয়ে হয়ে আবার ফিরে আসা। জলের উত্তাল ঢেউয়ে সাঁতার কাটতে কাটতে যেন শূন্যে উড়ে যাওয়া, আবার ফিরে আসা ঢেউয়ের কোলে। নয় থেকে এগারো চরণে তার বিচরণ, কারণ এর থেকে দীর্ঘায়িত হলে স্বাদে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে এবং কম হলে মনে হতে পারে হাওয়াই মিঠাই, যেন মিলিয়ে গেল। কাজেই এর চরণপ্রস্তাবনা নয় থেকে এগারো। কুত্রাপির কয়েকটি ক্ষীণ বৈশিষ্ট্য হলো এর স্যাটায়ারধর্মিতা, অব্যবহৃত-পরিত্যক্ত-অপ্রচলিত শব্দের ব্যবহার, বাঙালিয়ানা এবং নতুন শব্দ ও শব্দবন্ধের প্রয়োগ। আপাত অর্থহীন এই প্রচেষ্টা কখনো অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকানোর সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দেয়ার মতো রক্তচক্ষু ধারণ করতে পারে, আবার মগজকে খুঁচিয়ে তোলার মতো গনগনে অগ্নিশলাকাও হয়ে উঠতে পারে, এমন দুরাশা রয়ে গেল। শেষ বিচারে কী হবে অথবা হবে না, তার মূল সিদ্ধান্তদাতা সময়। নিরীক্ষাপ্রবণতার ভেতরেই লুকানো থাকে শিল্পের জন্মবীজ। এক্ষেত্রে সফলতা কিংবা ব্যর্থতা বিষয়ে কবির কোনো অবস্থান নেই। তবে আকাক্সক্ষার দার্ঢ্যকে জিইয়ে রেখে ‘কদাচিৎ কুত্রাপি’ পাঠকের দুয়ারে নিবেদিত হলো।