“ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট” বই সম্পর্কে কিছু কথাঃ
প্রত্যাশিতভাবেই এই গ্রন্থের মুখ্য চরিত্র দুটি। রিয়্যার অ্যাডমিরাল লুই মাউন্টব্যাটেন এবং মােহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। অন্যরা পার্শ্বচরিত্র। তবে যেমন দাপটের সঙ্গে লুই মাউন্টব্যাটেন বিরাজমান তেমনটি গান্ধীজী নন।
মাউন্টব্যাটেনের চোখে তিনি যেমন ‘ছােট্ট বিষন্ন পাখি’, আমাদের চোখেও তাই-ই। বলাবাহুল্য, এ কোনাে স্বেচ্ছাচারী চরিত্রায়ন নয়। তৎকালীন রাজনৈতিক আকাশে মােহনদাস গান্ধীর ভূমিকা বাস্তবিকই অসহায় এবং বিষন্ন। দেশভাগ যখন ‘সেট ফ্যাক্ট”, দ্বি-জাতিতত্ত্ব যখন সাধারণ মানুষের কাছে পরিত্রাণ পাবার একমাত্র বাস্তব সত্য পথ, তখন গান্ধীজীর ভূমিকা নীরব অসহায় দর্শক ছাড়া আর কী হতে পারে? তাঁর বেদনা যে এই অনিবার্যতা তিনি ঠেকাতে পারেননি। কিন্তু তার চেয়েও বড় বেদনা যে, দেশের মানুষ তাঁর ইচ্ছামতাে চলেনি। সবাই এসে একে একে সরে গেছে তার আদর্শ থেকে। বেঁচে থাকতেই তিনি একলা থেকে গেলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
চৌদ্দই আগস্ট মধ্যরাতে জওহরলাল যখন “ট্রাইস্ট উইথ ডেসটিনি”র কথা বললেন তখন দেশের সাধারণ এবং ছিন্নমূল মানুষ অনেক সান্ত্বনা পেয়েছিলেন। কিন্তু আগামীদিনে সে সান্ত্বনা টেকেনি। অনেক মত ও পথ, সামাজিক, রাজনৈতিক অনেক টানাপড়েনের সংঘাতে বিবর্ণ হয়ে গেছে সেই সান্ত্বনা।
চেষ্টা সত্ত্বেও অনেক মুদ্রণপ্রমাদ ঘটে গেছে। সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। গান্ধীজীর জীবনাবসান হয়েছিল ৩০শে জানুয়ারি, ১৯৪৮ সনে। রােগশয্যায় শুয়ে দেহ রাখেননি তিনি। গান্ধীজী নিহত হয়েছিলেন। প্রায় ইচ্ছামৃত্যুই বলা যায় কারণ তিনি কোনাে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেননি। কিন্তু এই আত্মত্যাগ সত্ত্বেও গান্ধীজী দধীচি হলেন না। তাঁর অস্থি দিয়ে কোনাে বত্র আজও নির্মিত হলাে না। এ আমাদেরই পাপ।
তাঁর পুণ্যস্মৃতিতে নিবেদিত হলাে এই অনুবাদগ্রন্থটি।