রূপচানের আশ্চর্য কান্না বইয়ের ফ্লাপে লেখা কথা সম্পর্কের লাবণ্য ও অন্ধকারে সাঁতরে ফেরে সে, নিত্যদিন। ঘুরপাক খায়। স্বপ্নতাড়িত ও লড়াকু এই মানুষটি লাঙ্গলের ফলা টেনে আর মৌসুমী বৃষ্টির ভেতর ফসল ও আউশ ধানের খড় আগলে রাখে। সে কখনো রবীন্দ্রনাথ পড়েনি, কিংবা জীবনানন্দ। জীবনের চরম দুঃসময়েও সে কারো কাছে অভিযোগ করেনি, এতটুকু করুণা প্রার্থনাও নয়। দারিদ্র, স্ত্রী-বিয়োগের বেদনা, বিরামহীন উদ্বেগ, আত্মীয়ের সম্পর্কত্যাগ-সবই সে বহন করে যায় নিঃশব্দে এবং একা।
এই রূপচান মণ্ডল ওরফে রূপু একদিন অনুভব করে, জীবন থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা খায়ো গেছে। তার; এমনকিছু, যা না-থাকলে জীবন অর্থহীন, অকেজো ও মূল্যহীন হয়ে পড়ে। কী সেই হারোনো বস্তু? যৌনশক্তি। ভীষণরকম অবাক হয় রূপু। ভড়কে যায়। গাছপালা-ঘেরা গ্রামের বাড়ির উঠোনে হেমন্তের শেষরাতেও সে মৃদু ঘেমে ওঠে। অদৃশ্য এক ইন্দ্রিয়ের থাকা-না-থাকার অলৌকিক দহন তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে, আশ্চর্য বেদনায়। আপাত নিস্তরঙ্গ ও ছাপোষা রূপুর মগজে ঢুকে পড়ে ভাবুক মানুষের প্রতিচ্ছবি। এমন চিন্তাও সামনে এসে দাঁড়ায়, সে তো নপুংসক নয়; আবার দ্বিতীয় স্ত্রীকে পরিতৃপ্ত করতে পারবে না। বাকি জীবন কীভাবে পার করবে সে? রূপুর ধূসর জীবনের মধ্য দিয়ে উঁকি দেয় উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ জনপদের নিখুঁত চিত্র, যেখানে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ মিলেমিশে দিন্যাপন করে। সুখেদুঃখে পাশে দাঁড়ায়। হাসে। কাঁদে। নানামুখি সংকট ও অসুখে জীবন পার করে। এই উপন্যাস সেসব মানুষেরই দিনযাপনের রেখাচিত্র।