অসমের পাহাড়ের পাদদেশে কিছু কিছু জায়গায় লােহা পাওয়া যেত। এই লােহায় তৈরি হত দা, কোদাল, কামান-তােপ। শ’য়ে শ’য়ে লােশলীয়া’, তিরুঅলীয়া পাইকরা মাটি খুঁড়ে লােহা বের করত। কিন্তু একসময় লুপ্ত হয়ে গেল এই শিল্প। যারা লােহা বের করত, তাদের শ্রমের চিহ্ন হয়ে পড়ে রইল সব কামান-তােপ। এই পরিণতি ছিল অবশ্যম্ভাবী। কারণ প্রয়ােজনীয় হলেও অর্থনৈতিক দিক থেকে কাজটি লাভজনক ছিল না। লােশলীয়া ও তিরুয়াল পাইকদের দিয়ে পালা করে বছরে তিন চারমাস বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করানাে হত। তাদের শ্রমের ফসল ছিল খনির এই লােহাচুর। মােয়ামরীয়া অভ্যুত্থানের ভূমিকম্পে যখন রাজাদের কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বের ভিত ক্ষয় হতে লাগল, তখন ক্রমশ এই কাজ করানাের ব্যবস্থাও শিথিল হয়ে এল। সনাতন সমাজের সম্পর্কগুলােও বদলাতে লাগল। খেলগুলিতে ভাঙন ধরল। খেলের অনেক প্রজা বৃত্তি ছেড়ে চাষ শুরু করল। আসলে তারা অবশ্য কৃষকই ছিল। এভাবেই নানা প্রতিহিংসা ও গৃহযুদ্ধের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল বহু প্রাচীন প্রথা ও বৃত্তি। অভ্যুত্থানের কম্পনে পিতৃপিতামহের সামাজিক সম্মানের ভিত্তিও টলমল করতে লাগল। ভেঙে পড়ল সকল প্রাচীন ব্যবস্থা। লােহা-খনিতে লােহা খোঁড়ার মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। ভাটিতে হাপর চলে না আর। লােহামাটি ভাটিতে পুড়ে বের করা হয় না লােহার টুকরাে। যারা লােহা খুঁড়ে আনত তাদের সুখদুঃখের ইতিহাস হারিয়ে গেল। অবশ্যম্ভাবী ছিল তা। ইতিহাসের এক অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। এখন পড়তে শুরু করুন। কায়-ক্লেশ, ঘাম-রক্ত, হাসি-কান্নার ইতিহাস বিজড়িত আমাদের কাহিনি—আমাদের একান্ত আপনার কাহিনি।