পদ্মানদীর মাঝি

৳ 140.00

লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশক ক্রিয়েটিভ পাবলিকেশনস
আইএসবিএন
(ISBN)
97898489542024
ভাষা বাংলা
পৃষ্ঠার সংখ্যা ১১২
সংস্কার 1st Published, 2018
দেশ বাংলাদেশ

“পদ্মানদীর মাঝি” বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত উপন্যাসগুলাের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ‘পদ্মানদীর মাঝি’। ১৯৩৬ সালে উপন্যাসটি প্রকাশের পর আলােচক ও পাঠকসমাজে ব্যাপক আলােড়ন তােলে এবং অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়। ভারতীয় প্রাদেশিক ভাষা ছাড়াও ইংরেজি, চেক, রুশ, হাঙ্গেরিয়ান, লিথুনিয়ান, নরওয়েজিয়ান, সুইডিশ প্রভৃতি ভাষায় ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসের অনুবাদ প্রকাশিত হয়। Boatman of the Padma’ নামে এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে।
‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসে পদ্মার তীর সংলগ্ন কেতুপুর এবং আশপাশের গ্রামের পদ্মার মাঝি ও জেলেদের বিশ্বস্ত জীবনালেখ্য চিত্রিত হয়েছে। শহর থেকে দূরে হতদরিদ্র জেলেমাঝিদের যে জীবনচিত্র এতে অঙ্কিত হয়েছে তা যেন বাস্তবের সঙ্গে হুবহু মিলে যাওয়া এক অতি পরিচিত জীবনচিত্র। জেলেপাড়ার মাঝি ও জেলেদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, অভাব-অভিযােগ যা কিনা প্রকৃতিগতভাবে সেই জীবনধারার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, তা এতে নিপুণভাবে চিত্রিত হয়েছে।
‘পদ্মানদীর মাঝি’ বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক উপন্যাস। অলঙ্কার শাস্ত্রে আঞ্চলিক উপন্যাসের সংজ্ঞা অনুসারে একে সার্থক আঞ্চলিক উপন্যাস বলা যায়। উপন্যাসের অঙ্গশৈলী, গঠন, চরিত্রের মুখে আরােপিত ভাষা, জীবনাচরণ, জীবনচর্চা এসবই যথার্থ আঞ্চলিক উপন্যাসের পরিচয় বহন করে। তাই ‘পদ্মানদীর মাঝি’ আঞ্চলিক উপন্যাস হিসেবে বাংলা সাহিত্যে বিশিষ্টতার দাবিদার।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ নানা কারণে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরােহণ করে। উপন্যাসটির জনপ্রিয়তার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিশিষ্ট সাহিত্য সমালােচক ডক্টর শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘বঙ্গ সাহিত্যের ধারা’ গ্রন্থে। লিখেছেন, “ইহার একটি কারণ অবশ্য বিষয়ের অভিনবত্ব-পদ্মার মাঝিদের দুঃসাহসিক ও কতকটা অসাধারণ জীবনযাত্রারও আকর্ষণী শক্তি। দ্বিতীয় কারণ, পূর্ববঙ্গের সরস ও কৃত্তিমতা বিবর্জিত কথ্য ভাষার সুষ্ঠু প্রয়ােগ। কিন্তু উপন্যাসটির সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ হইতেছে ইহা সম্পূর্ণরূপে নিম্নশ্রেণি অধ্যুষিত গ্রাম্য জীবনের চিত্রাঙ্কনে সূক্ষ ও নিখুঁত পরিমিতবােধ, ইহার সংকীর্ণ পরিধির মধ্যে সনাতন মানবপ্রবৃত্তিগুলির ক্ষুদ্র সংঘাত ও মৃদু উচ্ছাসের যথাযথ সীমা নির্দেশ।”
জেলে-মাঝি অধ্যষিত গ্রামের জীবনযাত্রাই ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসের মূল উপজীব্য। এখানকার সবই যেন প্রকৃতির অমােঘ নির্দেশে পরিচালিত হয়। এই আঞ্চলিক উপন্যাসের কোথাও “এই ধীবর পল্লীর জীবনযাত্রায় শিক্ষিত আভিজাত্যের মার্জিত রুচি ও উচ্চ আদর্শবাদের ছায়াপাত নাই।”
‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সমালােচক যথার্থই বলেছেন, “অধিবাসিদের ঈর্ষা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রীতি, সমবেদনা, চক্রান্ত, দলাদলি সমস্তই বাহিরের মধ্যস্থতা ছাড়া নিজ প্রকৃতি নির্ধারিত সংকীর্ণ কক্ষপথে আবর্তিত হইয়াছে।” এ উপন্যাসে যে সব চরিত্র চিত্রিত হয়েছে তা অত্যন্ত জীবন্ত ও প্রাণবন্ত। জীবনের বাস্তবতা ফুটে উঠেছে তাদের অভাব-অনটন, সুখ-দুঃখ, কর্মচাঞ্চল্য আর নিজস্ব ভাষায় কথা বলার মধ্যদিয়ে। দারিদ্রের নিষ্ঠুর কশাঘাতে জর্জরিত জেলেপাড়ার ঘরে ঘরে শিশুদের কান্না কোনােদিন থামে না। জেলেপাড়ায় ক্ষুধাতৃষ্ণার দেবতা, হাসি-কান্নার দেবতা, অন্ধকার আত্মার দেবতা-এদের পুজো কোনােদিন শেষ হয় না।
‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসের সমাজে গ্রামের ব্রাহ্মণ শ্রেণির লােকেরা অত্যন্ত ঘৃণাভরে জেলেমাঝিদের পায়ে ঠেলে। কালবৈশাখীর ঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার জন্যে বার বার আঘাত হানে। বর্ষার জল অবাধে তাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তারা নিজেদের মধ্যে রেষারেষি ও হানাহানিতে মেতে থাকে। ক্ষুধা ও পিপাসায়, কাম ও মমতায়, স্বার্থ ও সংকীর্ণতায় নিমজ্জিত হয়ে তারা জীবন কাটায়। তালের রসের মদ ও অন্নপচা মদ খেয়ে তারা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
ঈশ্বরের অস্তিত্ব কেতবপুরের জেলেপাড়ায় মেলে না। পদ্মা ও পদ্মার খালগুলাে জেলেদের জীবিকার উৎস। তারা মাছ ধরে, মাঝিগিরি করে। কেউ কেউ খাস পদ্মার বুকে জাল ফেলে, আবার কেউ কেউ খালে কুঁড়াে জাল ফেলে জীবিকা নির্বাহ করে। এসব বাস্তবচিত্ৰই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত নৈপুণ্যের সাথে এবং যত্নসহকারে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসে শিল্পরূপ দিয়েছেন। আশ্চর্য শৌকর্য ও পরিমিতি দিয়ে ঔপন্যাসিক অতি যত্নের সাথে চরিত্রগুলােকে গড়ে তুলেছেন। এরা সমাজের একেবারেই খাটি ও অকৃত্রিম চরিত্র। সব মিলিয়ে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ একটি সার্থক ও সুখপাঠ্য উপন্যাস।

শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, নিয়তিবাদ ইত্যাদি বিষয়কে লেখার মধ্যে তুলে এনে বাংলা সাহিত্যে যিনি অমর হয়েছেন, তিনি হলেন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। খ্যাতিমান এই সাহিত্যিক ১৯০৮ সালের ১৯ মে বিহারের সাঁওতাল পরগনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, আর মানিক ছিলো তাঁর ডাকনাম। বাবার বদলির চাকরিসূত্রে তাঁর শৈশব, কৈশোর ও ছাত্রজীবন কেটেছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে, যার ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের পটভূমিতে বিভিন্ন সাহিত্য রচনা করেছেন তিনি। প্রবেশিকা ও আইএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় গণিত বিষয়ে অনার্স করতে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। এখানে পড়াশোনাকালে বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে তিনি 'অতসী মামী' গল্পটি লেখেন। সেই গল্পটি বিখ্যাত 'বিচিত্রা' পত্রিকায় ছাপানো হলে তা পাঠকনন্দিত হয় এবং তিনি সাহিত্যাঙ্গনে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি সাহিত্য রচনায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন, যার ফলে তাঁর পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং তিনি আর পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। তাঁর হাতে বাংলা সাহিত্যে এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় ঐ সময়ে, যখন সারা পৃথিবী জুড়ে মানবিক বিপর্যয়ের এক চরম সংকটময় মুহূর্ত চলছে। কমিউনিজমের দিকে ঝুঁকে যাওয়ায় তাঁর লেখায় একসময় এর ছাপ পড়ে এবং মার্ক্সীয় শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমগ্র। ফ্রয়েডীয় মনোসমীক্ষণেরও প্রভাব লক্ষ্য করা যায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র-তে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমূহ এর মধ্যে 'পদ্মানদীর মাঝি', 'দিবারাত্রির কাব্য', 'পুতুলনাচের ইতিকথা', 'শহরতলি', 'চতুষ্কোণ', 'শহরবাসের ইতিকথা' ইত্যাদি বিখ্যাত উপন্যাস, এবং 'আত্মহত্যার অধিকার', 'হারানের নাতজামাই', 'বৌ', 'প্রাগৈতিহাসিক', 'সমুদ্রের স্বাদ', 'আজ কাল পরশুর গল্প' ইত্যাদি গল্পগ্রন্থ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা রচনার কিছু নিদর্শন থাকলেও সেগুলো তেমন উল্লেখযোগ্যতা অর্জন করেনি। অসামান্য এই কথাসাহিত্যিক মাত্র ৪৮ বছর বয়সে ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন →
বই সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা বা মতামত থাকলে আমাদেরকে জানান
শেয়ার করুন

লেখকের অন্য বইসমূহ