“মহাবিশ্বে ভ্রমণ ও আকাশ চেনো তারা চেনো” বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
আকাশপ্রান্তে চোখ মেলেই মানুষ জানতে চেয়েছে, ওখানে কী আছে। প্রাচীনকালে মানুষের ভাবনায় আকাশ ছিল গম্বুজ বা উপুড় করা এক বাটি। সূর্যদেব আর চন্দ্রদেব রথ হাঁকিয়ে দিনে একবার গম্বুজের এদিক হতে ওদিক যেতেন। গগণান্তরালের সবই তাে দেবতার রাজ্য! তখন মানুষের জানার সাধ ছিল, সাধ্য ছিল না। তাই যেটুকু দেখত, তা ছিল শান্ত। ষােড়শ ও সপ্তদশ শতকের নক্ষত্রবিজ্ঞানে নতুন জোয়ার এল, আমাদের জ্ঞানও একলাফে পৌঁছে গেল সৌরলােকে। সেখান থেকে ক্রমে তা নক্ষত্রলােক ছাড়িয়ে দৃশ্যমান জগতের কিনারায় পৌঁছায়। আর ঠিক তখনই মানুষকে মস্ত বাধার মুখােমুখি হতে হয়। কেননা, আমরা তাে জানিই না, মহাশূন্যের শেষ কোথায় ; হয়তাে বা তা অসীম। তবে সময় সসীম, অন্তত ১৫০০ কোটি বছর পিছনে হেঁটে আমরা মহাবিস্ফোরণের মধ্যে সৃষ্টির শুরু দেখতে পাই। এর মানে, ১৫০০ কোটি আলােকবর্ষের চাইতে বেশি সময় পায়নি এখানে আসার জন্য। তাই আমাদের দেখা আকাশ অসীম নয়, তবে এতদূরের যে, তা প্রায় অশেষ। সৃষ্টির এমনতর তত্ত্বতালাশ বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের প্রাণ-রক্তেই রয়েছে।’
আকাশে রামধনুর জাদুরঙে মােহিত হন না, এমন মানুষ বুঝি নেই। তবে এতে জাদু নেই ছিটেফোটা, আছে শুধু বিজ্ঞান। আর বিজ্ঞানে বিস্ময় আছে। মানুষকে তার অদম্য কৌতুহলই টেনে নিয়ে যায়। প্রকৃতিতে অমিল অনেক। এমন বিষম বিশ্বকে বিশদ বুঝতে বিজ্ঞানীরা তার অন্তর্লীন সুরটুকু খুঁজে বেড়ান। যেমন, বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, তাপ, এক্স-রশ্মি, বেতার তরঙ্গ, মহাজাগতিক রশ্মি—সবারই সাধারণ এক বৈশিষ্ট্য আছে। তা হলাে, এরা সবাই ঢেউয়ের মতাে এঁকেবেঁকে দৌড়ায়। তরঙ্গের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী যদি এদের সাজানাে হয়, তবে দেখা যায়, বেতার তরঙ্গ সবচাইতে লম্বা আর। মহাজাগতিক রশ্মি সবচাইতে খাটো দৈর্ঘ্যের। এসব তরঙ্গদের বিজ্ঞানীরা তড়িচ্চুম্বকীয় বর্ণালী বলেন। বর্ণালীর মধ্যে কেবল আলোর অংশটুকু আমরা দেখি, বাকিরা অদেখা রয়ে যায়।
তবু আমরা কতটুকু জানি? দিনের পর দিন আমরা আলাের সাথে একাত্ম হয়ে থাকি। তবু আমরা কি আলােকে জানি? আলাে কণা, না তরঙ্গ? আলাে কোথা হতে আসে, কোথায়ই বা চলে যায়? পর্যবেক্ষণ আর পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা কিছু কিছু জেনেছেন ঠিকই, কিন্তু কেউ এখনও সঠিক জানেন না, আলাে কী?
ছােট পড়ুয়াদের অমিশেল মনে এমন কত না জিজ্ঞাসা! জানার জন্যে জিজ্ঞাসু এমন পাঠকের মনে বিজ্ঞান-ভাবনা, বিশেষ করে আকাশ-ভাবনা তাই খুবই স্বাভাবিক। এদের কথা মাথায় রেখে রচিত হয়েছে এই গ্রন্থ। মহাজগৎ অনেক বড়, তবে তাও সসীম। কিন্তু আমাদের আকাশ জানার আশা, বিশ্বকে খােলামেলা বােঝার ইচ্ছা যেন অসীম! আমাদের চারপাশের বিশ্বপ্রকৃতির রহস্য বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানীদের ভাবনায় কীভাবে ধরা পড়েছে, সরল কথায় তা বলা হয়েছে এই বইটিতে। যারা আকাঙ্খ করেন সেসব কথা জানতে, আশাকরি, তাদের ভালােই লাগবে। সৌমেন সাহা
ঢাকা, জুন ২০১৬ইং