‘বেলভেদ্রের বিনােদিনী’ মূলত একটি আত্মজৈবনিক উপন্যাস। কাহিনির সূচনা সুইজারল্যান্ডের দাভােজ শহরে অবস্থিত প্রখ্যাত স্টাইগেনবার্গার গ্র্যান্ড হােটেল বেলভেদ্রেতে। এখানেই এক গভীর রাতে নাইট অডিটর পদে কর্মরত অবস্থায় লেখকের সঙ্গে পরিচয় হয় মিরিয়াম জোনাথনের। তিনি হােটেলের নথিবদ্ধ একজন কম্পেনিয়ন বা রূপােপজীবিণী। মিরিয়াম জোনাথনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্র ধরে লেখকের মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তিগত আবেগ উপন্যাসটি লেখার প্রধান প্রেরণা। কে এই মিরিয়াম জোনাথন? সুইজারল্যান্ডের জুরিখের একটি গোঁড়া ক্যাথলিক খ্রিষ্টান পরিবারে তার বেড়ে উঠা। পড়াশােনা, কর্মজীবন সেখানেই। ব্যাংকার বাবার সংসারে জন্ম নেয়ার ছয় বছরের মাথায় মা মারা যান। বাবা আর বিয়ে করেননি। মায়ের অকালমৃত্যুর পর ডরােথি নামে এক কাজের মেয়ের কাছে মানুষ হতে থাকে মিরিয়াম। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করে জুরিখের একটি ব্যাংকে চাকরিও নেন। হঠাৎ তার জীবনে আসে বহরাম জামশেদি নামের এক ইরানি যুবক। এরপরই একের পর এক ঘটতে থাকে রােমাঞ্চ, দুর্ঘটনা, হতাশা আর না পাওয়ার করুণ কাহিনি। একমাত্র কন্যা লেইলা ও মাতসমা ডরােথিকে নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করতে করতে একদিন তাকে সমর্পিত হতে হয় পৃথিবীর আদিম পেশাটির দিকে। যতই কাহিনির গভীরে যাওয়া যাবে ততই পাঠকের মন আর্দ্র হয়ে পড়বে মিরিয়ামের করুণ পরিণতিতে। জানা যাবে, পৃথিবীর নামকরা কত রথী-মহারথী আর সরকার প্রধান তার শয্যাসঙ্গী হয়েছেন। যাদের মধ্যে ছিলেন লিবিয়ার প্রয়াত শাসক গাদ্দাফি থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিনের জনৈক ধনকুবের বন্ধু পর্যন্ত। এছাড়া উপন্যাসটিতে সুইজারল্যান্ডের নৈসর্গিক বর্ণনাও ভ্রমণপিপাসুদের তৃপ্তি দেবে। বিশেষ করে দাভােজ শহরের প্রতিটি রাস্তা, হােটেল, জঙ্গলের বর্ণনা লেখক এতটাই নিখুঁতভাবে দিয়েছেন যে, পাঠক নিজেই সেই স্থানের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করবেন।