“খনা ও খনার বচন” বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ
ভারতীয় বিজ্ঞানের সূচনাকারী হিসেবে সুশ্রুত বা আর্যভট্টের নাম করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রায়ােগিক দিক দিয়ে খনাই প্রথম যার সুত্র তখনকার প্রধান খাত কৃষিতে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবহৃত হতাে। প্রায় দেড় সহস্র বছর ধরে খনা যুক্ত আছেন কৃষিতে-আম জনতার জীবন-জীবিকায়। এ ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃৎ। তার মতাে আর কেউ নেই। তাই বিজ্ঞানী হিসেবে তার মর্যাদা পথিকৃৎ বিজ্ঞানীর মতােই হওয়া বাঞ্ছনীয়। খনাকে নিয়ে বৈজ্ঞানিক-ঐতিহাসিক গবেষণা অপ্রতুল। কিন্তু ভারতবর্ষজুড়ে এই বিদুষী নারীকে নিয়ে কিংবদন্তীর অন্ত নেই। খনার বচন বাংলাদেশের সর্বত্র প্রচলিত। প্রাচীন ভারতবর্ষের বিশাল এলাকাজুড়ে খনার বচন প্রায় দেড় সহস্র বৎসরব্যাপী প্রচলিত ছিল এ নিদর্শন পাওয়া যায়। তবে কৃষি নির্ভর বাংলাবিহার-উড়িষ্যা ও আসামের গ্রামীন নারী-পুরুষের মাঝে আজো প্রবলভাবেই খনার বচনের চর্চা দেখা যায়। পূর্বে একদল লােক খনার বচন পাঠ করে আবহাওয়া-স্বাস্থ্য-কৃষিসহ বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যার সমাধান দিতেন এবং এটাই তাদের পেশা ছিল। এদেরকে আচার্যও বলা হতাে। কৃষকরা আচার্য ঠাকুরদের বাড়িতে ভিড় জমাতাে। এখনাে উড়িষ্যায় এ ধরণের পেশাদার খনার বচন ব্যবহারজীবী সম্প্রদায় দেখা যায়। আমাদের দেশে ব্রাহ্মণ, জ্যোতিষীদের মধ্যে কেউ কেউ খনার বচনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন। গ্রামের ঘরে ঘরে ব্যবহৃত পঞ্জিকা পুস্তকেও খনার বচন উদ্ধৃত হয়ে থাকে। কৃষকেরা এখনাে প্রায় সকলেই খনার বচনকে অনুসরণ করে থাকেন। কৃষিবিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যেও বৈজ্ঞানিক তথ্যের পাশাপাশি খনার বচনকে উদ্ধৃত করে কৃষি সমস্যার সমাধান-পরামর্শ প্রদান করতে দেখি। মােটকথা কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে খনার বচন ব্যবহারের সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি ধারা প্রবহমান রয়েছে। সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ধারায় প্রচলিত খনার বচনই খনা নামের কোন বিশেষ ব্যক্তির অস্তিত্বের প্রমান করে এ কথা বলতে আজ আর দ্বিধা নেই। রাজা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য (৩৮০-৪১৫ খ্রি.)-এর সভাসদ পণ্ডিতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নয়জনকে নবরত্ন আখ্যায়িত করা হতাে। তারা হলেন: ধন্বন্তরি, ক্ষপণক, অমরসিংহ, শঙ্কু, বেতালভট্ট, ঘটকৰ্পর, কালিদাস, বররুচি ও বরাহমিহির। এঁদের মধ্যে শেষােক্তজনকে পিতাপুত্রের মিলিত নামও বলা হয়ে থাকে। বরাহ ও মিহির অর্থাৎ মিহির ছিলেন বরাহ পুত্র। তিনিও সভাপতি ছিলেন। সিংহল রাজকন্যা বিদুষী খনা ছিলেন মিহিরের সহােধ্যায়ী ও স্ত্রী। কথিত আছে খনার প্রজ্ঞার কথা মহারাজের নিকট পৌছালে তিনি খনাকেও সভাপতি মনােনীত করেন।