‘সহজ কথায় মাছচাষ(রঙিন মাছের চাষ ও প্রজনন সহ)’ বইটির ভূমিকা: গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে মাছ চাষের একটি বিশাল ভূমিকা আছে। সভ্যতার আদিকাল থেকেই মাছ মানব জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। মাছ একদিকে যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের যোগান দেয়, তেমনই মাছচাষীকে অর্থবহ অর্থাগমের সুযোগ করে দেয়। বিজ্ঞানসম্মত মাছচাষের প্রযুক্তি সঠিক ব্যবহার করার জন্য মাছের উৎপাদন অনেক গুণ বেড়েছে। মাছের প্রণোদিত প্রজননের প্রযুক্তির মাধ্যমে অধিক পরিমাণ চারা উৎপাদন সম্ভব হয়েছে ও তার চাহিদাপূরণও সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে অনেকে মাছচাষ ও তার প্রজননকে জীবিকা অর্জনের পন্থা হিসাবে নিয়েছেন। আবার অনেকেই এইসব প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার জন্য মাছচাষকে জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করতে পারেন না। বাংলা ভাষায় মাছচাষের বইয়ের অপ্রতুলতার জন্য অনেক মাছচাষী, উদ্যোগপতিরা মাছচাষ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও নতুন নতুন ধারণা পান না। আশাকরি এই বইটি সহজ কথায় মাছচাষ।”—এই সমস্যা কিছুটা সমাধান করবে। বইটি মাছচাষ সংক্রান্ত প্ৰযুক্তি বিস্তারে সহায়ক হলে, আমার প্রচেষ্টা সার্থক হবে। মৎস্যবিজ্ঞান পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছেও এই বইটি সমাদর লাভ করবে। বইটিতে ব্যবহৃত তথ্য ও বিজ্ঞানসম্মত ধারণা ভবিষ্যতে তাদের মাছ নিয়ে উচ্চ পড়াশুনায় সহায়ক হবে। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্তৃপক্ষ, সমস্ত শিক্ষক ও কর্মচারীবন্ধু ও আমার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সহকমীরা (ড. নারায়ণচন্দ্র সাহু, ড. সংকর সাহা, শ্ৰী শিবানন্দ সিংহ, ড. সুকান্ত বিশ্বাস, শ্ৰী নকুল মণ্ডল, ড. সৌমেন মহাপাত্র, সুদীপ্ত দেবনাথ ও বিশ্বজিৎ তালুকদার) বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন, তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের আঞ্চলিক প্রকল্প নির্দেশনালয়,অঞ্চল-II-এর আঞ্চলিক প্রকল্প নির্দেশক ও বিজ্ঞানীদের কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ, যাদের অনুপ্রেরণায় বইটি সম্পূর্ণ রূপ পেয়েছে। এই বই লেখার কাজে আমাকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন ড. ইন্দ্ৰনীল দাস, সহ রসায়নবিদ, সার নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার, বহরমপুর এবং চন্দ্ৰশেখর চ্যাটাজী ও অরিন্দম ব্যানার্জি। আমার শিক্ষক মহাশয় ড. শ্যাম সুন্দর দানা ও ড. শিবকিঙ্কর দাস, অধ্যাপক, মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, প: ব: প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন সময়ে এই বই লেখার জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, ওনাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। দে’জ পাবলিশিং-এর কর্ণধার শ্ৰী সুধাংশুশেখর দে বইটি প্রকাশনার দায়িত্ব নেওয়ায় আমি তার কাছে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ। পরিশেষে, যাদের কথা না বললে আমার বইটি অসমাপ্ত হয়ে যাবে তারা হলেন আমায় একান্ত নিকটজনেরা, আমার দাদু, বাবা-মা, কাকা-কাকীমারা, দাদা (ড. বিশ্বরূপ গোস্বামী), বৌদি (ড. জ্যোতিরানী গোস্বামী), ভাইবোনেরা (স্মরণিকা, সৌম্যব্রত, দেবার্থ, শুভ্ৰজিৎ, নীলাঞ্জন ও ঐন্দ্রিলা), আমার স্ত্রী (শ্ৰীমতি সংঘমিত্ৰা গোস্বামী) ও মেয়ে (অদ্রিজা গোস্বামী)-ওনাদের আন্তরিক প্রার্থনা ও প্রচেষ্টায় এই বইটির আত্মপ্রকাশ সম্ভব হয়েছে।
—বিশ্বজিৎ গোস্বামী
“সহজ কথায় মাছচাষ(রঙিন মাছের চাষ ও প্রজনন সহ)” বইয়ের সূচিপত্র * মাছ ও মাছের চাষ
* চাষযোগ্য কয়েকটি মাছের স্বভাব ও খাদ্যাভাস
* মাছের শারীরিক গঠনতন্ত্র
* পুকুরের পরিবেশ
* মাছচাষের উপযুক্ত পরিবেশ , ব্যবস্থাপনা ও প্রয়োজনীয় উপাদানের প্রয়োগ পদ্ধতি
* মাছের প্রজনন
* পুকুর সংস্কার ও ব্যবস্থাপনা
* মিশ্র মাছচাষ
* জিওল মাছের চাষ ও প্রণোদিত প্রজনন
* সংহত চাষ
* গলদা চিংড়ি চাষ ও কৃত্রিম প্রজনন
* রঙিন মাছের চাষ ও প্রজনন
* মাছের রোগ ও তাঁর প্রতিকার
* মাছের পরিবহন ও সংরক্ষণ
* পরিশিষ্ট
আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ভূমিকা “মাছে ভাতে বাঙালি” প্রবাদ কথাটি এখন বিলুপ্তির পথে। অথচ দেশের প্রায় দশ ভাগ লোক মাছ ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। অন্যদিকে শরীরের প্রয়োজনীয় ষাট ভাগ আমিষের যোগান আমরা মাছ থেকে পেয়ে থাকি।
বাংলাদেশের জলবায়ু মাছ চাষের বেশ উপযোগী এবং মাছ চাষে খুব তাড়াতাড়ি অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। এসব ভেবেই “আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ’ বিষয়ে একটি বই প্রকাশের তাগিদ অনুভব করি।
বইটিতে মাছ চাষের সহজ এবং আধুনিক পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পাণ্ডুলিপি তৈরিতে সহযোগিতার জন্যে সাংবাদিক মনজুর কাদির মুকুলকে ধন্যবাদ। আশা করি মাছ চাষে বইটি যথেষ্ট সহায়ক হবে।
মিজান রহমান
“আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ” বইয়ের সূচি পাতা* মাছ চাষের প্রয়োজনীয়তা
* মৎস উৎপাদনের ক্ষেত্র
* মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ
* মৎস্য সম্পদ বাদ্ধার জন্য ::::: দেশে প্রচলিত মৎস্য আইন
* বিভিন্ন প্রকারের মাছ
* স্বাদু পানির মাছ,
* অর্ধ-লবণাক্ত পানির মাছ
* লবণাক্ত পানি বা সামুদ্রিক মাছ
* চাষ উপযোগী মাছ
* চাষ উপযোগী মাছের বৈশিষ্ট্য ও বর্ণনা
* রুই
* কাতলা
* মৃগেল
* সিলভার কার্প
* গ্রাসকার্প
* কমন কার্প
* পরিকল্পিত মাছ চাষ
* পুকুরের পানির গুণাগুণ
* পুকুরের মাছ চাষের সহায়ক ও অন্তরায় জলজউদ্ভিদ এবং জলজপ্রাণী
* আদর্শ পুকুর প্রস্তুতি
* আঁতুড় পুকুর ব্যবস্থাপনা
* পুকুর নির্বাচন
* পানির গভীরতা
* জলজ কীটপতঙ্গ দমন
* ডিপটারেক্স প্রয়োগ
* কেরোসিন বা ডিজেল প্রয়োগ
* রেণু সংগ্রহ ও পরিবহন
* রেণু পোনা ছাড়ার পদ্ধতি
* সার প্রয়োগ
* সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ
* পোনা বীচার হার ও বৃদ্ধি পরীক্ষা
* মাছের পোনা শনাক্তকরণ
* মাছের পোনা শনাক্তকরণ
* মজুদ পুকুরে মাছ চাষ
* সনাতন পদ্ধতির মাছ চাষ
* আধা নিবিড় মাছ চাষ
* নিবিড় মাছ চাষ
* মিশ্র মাছ চাষ
* পুকুর থেকে মাছ ধরার পদ্ধতি
* মাছের রোগ
* শিং ও মাগুর মাছের চাষ
* চিংড়ি চাষ
* গলদা চিংড়ি চাষ
* বাগদী চিংড়ি
* চাগ্যা চাপদা চিংড়ি
* গলদা চিংড়ির একক চাষ
* চিংড়ি আহরণ ও বিক্রি
* উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ি চাষ
* মাছ সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়াজাতকরণ
* মাছ ও চিংড়ি সংরক্ষণ করার পদ্ধতি
* মাছের রোগ ও প্রতিকার
* ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ
* ছত্রাকজনিত রোগ
* পরজীবীজনিত রোগ
* ভাইরাসজনিত রোগ
* পুষ্টিহীনতাজনিত রোগ
”বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ” বইটির ভূমিকা: বাংলাদশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। নদীমাতৃক বাংলাদেশে রয়েছে মাছ চাষের ঐতিহ্য। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রাশ ১৩ লাখ দিঘি, পুকুর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। যাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সনাতন পদ্ধতিতে মাছ চাষ হচ্ছে। একটু চেষ্টা করেলেই এসব জলাশয় বা দিঘি পুকুরে অধিক হারে মাছ উৎপাদন সম্ভব। অতীতে এ দেশে প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছ শুধু আহরণ করা হতো, চাষ করা হতো না। বর্তমানে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমিষের উৎস মাছ আর আগের মত সহজলভ্য নয়।
জাতীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং সর্বোপরি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান সম্প্রসারিত করার সুযোগ আরও ব্যপক। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ জলজ সম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। নদী, নালা, খাল, বিল, হাওর ও বন্যাপ্লাবিত জলাভূমি ইত্যাদি নিয়ে ৪.৩ মিলিয়ন হেক্টর জলরাশিতে মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনা অত্যান্ত উজ্জ্বল। দেশের মোট ৪৮টি জেলায় রয়েছে সেচ প্রকল্পের খাল। কিন্তু উম্মুক্ত জলাশয়ে দিন দিন মাছের উৎপাদন কমে আসছে। ফলে আমিষজনিত পুষ্টির অভাব প্রকট হয়ে উছেঠে, অথচ সুষ্ঠু পরিকল্পনা, লাগসই প্রযুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে এই বিরাট জলরাশি থেকে মাছের উৎপাদন বাড়ানোসহ ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর একাংশের কর্মসংস্থান করা সম্ভব। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে উম্মুক্ত জলাশয়ে নিবিড়-আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার সম্ভাবনা তুলনামূলকখভাবে কম এবং নতুন। এ লক্ষ্যে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র চাঁদপুর ১৯৯০ থেকে উল্লেখিত জলাশয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাসহ মাছ উৎপাদনের নিমিত্তে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সচেষ্ট হয় এবং সফলতা অর্জন করে।
বর্তমানে মাছের যে চাহিদা তাতে সঠিকভাবে মাছ চাষ করতে পারলে ঘুরে যাবে ভাগ্যের চাকা। মাছ চাষ করে এক-অন্যের অত্মকর্মসংস্থানের মডেল হওয়া এখন আর কোনো বিষয় নয়।
‘বৈজ্ঞানিত পদ্ধতিতে মাছ চাষ, বইটি মাছ চাষিদের কাজে আসবে বলে আশা করছি। সেই সাথে কামনা করছি আমরা যেন মাছের আগের দিনে ফিরে যেতে পারি। আগের মতোই আমরা যেন মাছে-ভাতে বাঙালি হতে পারি
–লেখক–
সূচিপত্র মাছ চাষের কলাকৌশল
মাছ চাষের ব্যবস্থাপত্র
পুকুরের সাধারণ সমস্যা ও সমাধান
মাছ চাষ