‘হুলো, মিনি ও পুষি’ একটি শিশুতোষ কার্টুন গল্প। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের কাছে এটি ছিল ব্যাপক জনপ্রিয় একটি সিরিজ। কার্টুন গল্পটির মূল নাম ছিল ‘বউ হারালো হুলো বিড়াল’। শিশুদের কথা বিবেচনায় রেখে নামটিতে সম্পাদনা করা হয়েছে। ১৯৬৬ সালে হোসেন কামাল সম্পাদিত মাসিক ‘মুকুল’ তৎকালীন কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের অর্থানুকূল্যে প্রকাশিত হত। সে সময় ‘মুকুল’ পত্রিকা সংগৃহীত এই সিরিজটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতো। পত্রিকাটির প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জা করতেন হোসেন জামাল। পুরাতন মুগলটুলী, শিরিন প্রেস, ঢাকা-১ থেকে মুদ্রিত হতো এই দৃষ্টিনন্দন শিশুতোষ পত্রিকাটি। পত্রিকাটির সম্পাদনা বিভাগে ছিলেনÑআবদুল হক, কবি মঈনুদ্দীন, কবি তালিম হোসেন, এম নাসির আলী এবং কবি হোসনে আরা। ‘বউ হারালো হুলো বিড়াল’ এই শিশুতোষ গল্পটির অঙ্গসজ্জা করেছিলেন হোসেন জামাল। পত্রিকাটির দাম ছিল তখন সাঁইত্রিশ পয়সা। সিসিমপুর গল্পটি এখন বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের উপযোগী করে তৈরী করা হচ্ছে নানান বৈচিত্রতা নিয়ে। সিসিমপুরের চরিত্রগুলোতে আমরা কিছু শিক্ষণীয় উপাদান যেমন খুঁজে পাই তেমনি কিছু আনন্দের খোরাকও রয়েছে। সিসিমপুরের একেকটি চরিত্র বড়ই বৈচিত্রময়। হালুম-একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। মাছ খেতে খুবই ভালোবাসে। ইকরি মিকরি-একটি ছোট দানো। যথেষ্ট ভাবুক একটি চরিত্র। শিকু-একটি ছোট শেয়াল। বিজ্ঞানমনষ্ক, যুক্তিবাদী গোয়েন্দা। শিকু বলতে পারো অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। টুকটুকি-একটি মেয়ে পুতুল। বই পড়তে ভালোবাসে। দ্য নিউ টুকটুকি অপেরা-এর উপস্থাপক। মানব চরিত্রের মধ্যে আছে লাল মিয়া-ডাকপিয়ন। এই চরিত্রটি অনুষ্ঠানের মধ্যভাগে মারা গেছে। তাঁর স্মৃতিতে সিসিমপুরে একটি পাঠাগার আছে। মুকুল ময়রা-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাসকৃত একটি যুবক ও উদ্যোক্তা। সুমনা ময়রা-সিসিমপুরের স্কুলের শিক্ষক। গুণী ময়রা- মিষ্টির দোকানদার। আশা ময়রা-গুণীর স্ত্রী, এবং সিসিমপুরের একমাত্র গ্রন্থাগারটির গ্রন্থাগারিক। পলাশ ময়রা-গুণী ও আশার ছেলে। এই চরিত্রগুলো শিশুদের মনে দাগ কাটলেও আমরা পুরোপুরি বিদেশী কার্টুন গল্পের প্রতি নির্ভরতা কমাতে পারিনি। আনন্দের সবটুকু রেশ তারা এখান থেকে নিতে পারেনা বলেই এটা হচ্ছে। আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে উপজীব্য করে ছেলেমেয়েদের উপযোগী সাহিত্য রচনা ও বিনোদনের মাধ্যম তৈরী করা জরুরী। শিশুদের মেধা ও মননে ভালো বিষয় গুলোর অনুরণনের ক্ষেত্র আমাদেরকেই চিহ্নিত করতে হবে। সময়ের পাতা ঘুরে এসে ‘মুকুল’ পত্রিকার জানুয়ারি ১৯৬৭ থেকে জুন ১৯৬৭ নাগাদ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত সিরিজ গুলোর গল্প তুলে ধরছি আমাদের স্কুল পড়ুয়া ছোট্ট বন্ধুদের জন্য। আমাদের শিশুদের জন্য এগুলোর কোন নতুন সংস্করণ নেই। পুরনো পত্রিকা থেকে একটি পরিছন্ন, আনন্দদায়ক ও মজাদার গল্প আমাদের এ প্রজন্মের শিশুদেরকে উপহার দেয়ার জন্যই এই প্রয়াস। পুরনো আবহ ঠিক রেখে আমাদের শিশুদের জন্য অঙ্গসজ্জা করেছেন ঊর্মী রুবিনা। তার প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। হাসান ইকবাল