“আফ্রিকা সাহিত্য ও নন্দনভাবনা” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
অনেক দিক থেকেই আফ্রিকার সাথে আমাদের এই উপমহাদেশের নিয়তির বিস্তর মিল আছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তাে পুরােটাই মিলে যায়। ঔপনিবেশিক শাসন, দমন, পীড়ন ও নির্যাতনের অভিজ্ঞতায় এই সাদৃশ্য অতীব নিকটবর্তী। ঔপনিবেশিকরা আফ্রিকায় বসবাসরত শত-শত নৃগােষ্ঠী, যারা ভাষা, বিশ্বাস-ব্যবস্থা, চিন্তাচেতনায় একে অপর থেকে ভিন্ন, তাদের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবধানকে বিবাদে রূপ দিয়ে উস্কে দিয়েছে একে অপরের প্রতি। ‘ভাগ কর শাসন কর’-নীতিতে পীড়ন চালিয়েছে স্থানীয় জনগােষ্ঠীর ওপর। আমাদের এ-অংশে ওরা হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে নানান কৌশলে দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে উস্কে দিয়েছে; আমাদের ভাগ করেছে এবং শাসন করেছে। আফ্রিকীদের পরিণত করেছে দাসে আর আমাদের এ-অংশের মানুষকে পরিণত করেছে ভাড়াটিয়া শ্রমিকে। উদ্দেশ্য একটাই-শ্রম নিংড়ে নিয়ে নিজেদের পুঁজির পাহাড় তৈরি করা। এমনকি, আফ্রিকা ও এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতার পরেও নানান প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাহায্য সহযােগিতার নামে এই শােষণ প্রক্রিয়া এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। কাজেই এই উভয় অংশের শিল্প-সাহিত্যের একটা বিরাট অংশের উৎপত্তিই হয়েছে এই শােষণ-নিপীড়নের প্রতি প্রতিক্রিয়ার মধ্য থেকে। এখানেই আমাদের সাহিত্যের সাথে আফ্রিকী সাহিত্যের সাযুজ্য বিদ্যমান। এটিই আফ্রিকী সাহিত্যের প্রতি আমাদের আগ্রহের অন্যতম প্রধান কারণ।