ইবনে বতুতার সফরনামা কিংবা প্রাচীন চীনা পর্যটকদের ভ্রমণতথ্য জনইতিহাসের উপাত্ত হয়ে উঠেছে, তবে ভ্রমণ যে অপরূপ সাহিত্য হতে পারে তা বঙ্কিম- সহোদর সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পালামৌ তার বড় দৃষ্টান্ত । সঞ্জীবচন্দ্রের আগে বাঙালি লেখকেরা প্রকৃত ভ্রমণসাহিত্য রচনা করেছিলেন বলে জানা নেই। আধুনিক সাহিত্যের একটা উজ্জ্বল শাখা হয়ে উঠেছে ভ্রমণসাহিত্য।
সাধারণ মানুষ ভ্রমণ করে, উপভোগ করে ভ্রমণসুখ কিন্তু একজন লেখক যখন ভ্রমণ করেন- তখন পর্যবেক্ষণ করেন ত্রিনয়নে। তার চোখ ও মন তখন তা দেখে, উপভোগ করে এবং এক অনাবিল সুখ ও আবেগ তার সৌন্দর্যপিপাসু মনকে তাড়িত করে। তার সফরের অভিজ্ঞতা তখন হয়ে ওঠে অনিন্দ্য এক সাহিত্যের রসদ। বাংলাদেশের ভ্রমণসাহিত্যের হাতেগোনা লেখকদের মধ্যে মিতালী হোসেন অন্যতম উজ্জ্বল নাম। ভ্রমণ তাঁর নেশা। পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরেছেন, ঘুরছেন। আর সেই অভিজ্ঞতাগুলো মনের মাধুরী মিশিয়ে পেলব-বর্ণিল ভাষাজাদুময়তায় বর্ণনা করেন। মিতালী হোসেন নিরন্তর লিখে চলেছেন। গ্রন্থসংখ্যাও কম নয় । সেই সঙ্গে যুক্ত হলো আরো একটি বই ‘হো চি মিনে হোঁচট’। তিনটি ভ্রমণকাহিনির সমাহার এই বইয়ের শিরোনাম রচনাটি ভিয়েতনাম সফরের কাহিনি। অন্য দুটি ভারতের চেন্নাই ও পাঞ্জাবের অমৃতসর ভ্রমণ নিয়ে রচিত। তাঁর রচনায় খুটিনাটি বিষয়গুলো যেমন নিরীক্ষিতভাবে ফুটে ওঠে, তেমনি ভ্রমণস্থানের ঐতিহাসিক আবহ এবং নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের সঙ্গে অধুনা যাপিত জীবন সম্পর্কে জানা যায়। হো চি মিনে হোঁচট পড়েও পাঠকেরা পুনর্বার সেই পাঠস্বাদে তৃপ্ত হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।