বাংলাদেশের উপন্যাসে একুশের চেতনা এক নতুন সম্ভাবনার উৎস মুখ খুলে দেয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ঘটনার অভিজ্ঞতায় জাতিসত্তার যে নবজাগরণ ঘটে, তার ফলে আমাদের সাহিত্যের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পালাবদল সূচিত হয়। একটি সংগ্রামের অভিজ্ঞতা ও সাফল্য বাঙালি জাতিকে স্বাধীন রাষ্ট্রসত্তা নির্মাণের উদ্যোগেও সাহসী করে তোলে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত ঘটনা প্রবাহ বাঙালির আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মশনাক্তিকরণের মূলধারাকে যেমন চিহ্নিত করেছে, তেমনি এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জাতির সংগ্রাম ও অগ্রযাত্রার লক্ষ বিন্দুও নির্দেশিত হয়েছে। পঞ্চাশ-ষাট দশকের কথাশিল্পীরা তাঁদের গল্প উপন্যাসে সময় ও জীবনের যে রূপ অংকন করতে থাকেন, একুশের বৈপ্লবিক চেতনার প্রভাবে সেখানে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনাদর্শ অনিবার্য হয়ে ওঠে। একুশের চেতনাবীজ থেকে বাঙালি জাতি যেমন স্বাধীকার আন্দোলনের প্রেরণা লাভ করেছে, তেমনি আমাদের কথাশিল্পীরাও অর্জন করেছেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, প্রগতিশীল জীবন চেতনা এবং ব্যক্তি ও সমষ্টির মুক্তির মূলমন্ত্র।