হীরা আর সোনার মতো অত্যন্ত মূল্যবান খনিজ সম্পদে ভরা একটি দেশ হয়েও পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র (নিচের দিক থেকে তৃতীয়), পশ্চিম আফ্রিকার ছবির মতো সুন্দর একটি দেশ, কালো কিন্তু অতি ভালো মানুষের দেশ – সিয়েরা লিয়ন।
কিন্তু দশ বছরের গৃহযুদ্ধে কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু আর জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই শরনার্থী হিসাবে পার্শ্ববর্তি দেশগুলোতে মানবেতর জীবন কাটানো নিরীহ এই ভালোমানুষগুলো শুধুমাত্র পরিস্থিতির শিকার হয়ে যুগ যুগ ধরে সীমাহীন দুঃখ আর কষ্টে কাটিয়ে দিল তাদের জীবনটা, যে সবের কিছুর জন্যই তারা দায়ী ছিল না। সুখ কী, শান্তি কী, সেটা তারা কখনোই জানতে পারল না। অবশেষে বহু আরাদ্ধ সেই শান্তির দেখা কি তারা আদৌ পাবে?
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর অংশ হিসাবে পশ্চিম আফ্রিকার যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ সিয়েরা লিয়নে যুদ্ধ পরবর্তি পূনর্বাসন এবং শান্তি আনয়নের জন্য ২০০১ থেকে ২০০২ ঠিক একটা বছর আমরা দায়িত্ব পালন করেছিলাম। সেই দেশ, দেশের মানুষ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ইতিহাস, যুদ্ধ, নৃশংসতা এবং অবশেষে শান্তি, এসব নিয়েই আমার এই গ্রন্থ।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সদস্যের অংশগ্রহণকারী দেশ বাংলাদেশের সদস্যরা সিয়েরা লিয়নেও একই প্রকার পেশাদারিত্ব ও কর্মতৎপরতা দেখিয়ে জাতিসংঘ ছাড়াও ওই দেশের সাধারণ মানুষ এমনকি সরকারেরও আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছে। যার স্বীকৃতিস্বরূপ সিয়েরা লিয়ন সরকার বাংলা ভাষাকে তাদের দ্বিতীয় অফিশিয়াল ভাষা হিসাবে ঘোষণা করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এতো সম্মান আর এমনভাবে ভালোবাসা প্রকাশের দ্বিতীয় আর কোনো নজীর আছে কি না আমার জানা নেই।