‘একাত্তরের দিনগুলি-র লেখক ঢাকার এলিট সমাজের একজন নারী, নগরমনস্কতা ও রুচি-সংস্কৃতিবােধে অভিজাত। তাঁর মানবিক চেতনার বিকীর্ণ আভা ডায়েরির ভাষাকে একইসঙ্গে অঘনত্ব ও শপথশুদ্ধতা দিয়েছে, মাতৃত্ব আর মুক্তিযুদ্ধের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে এৰং এই বার্তা পুনঃউত্থাপিত। হয়েছে যে, আমরা ঐতিহ্যগতভাবেই দেশ আর জননীকে সমার্থক করে আসছি—বহুকাল ধরেই, রবীন্দ্রনাথ তাে প্রগাঢ় বােধে ঘরের মাকেই দেশ-প্রতীকতা দিয়েছিলেন গােরা উপন্যাসে এবং আমাদের জাতীয় সংগীতের ভাষার পরতে পরতে তাে মায়েরই রূপকল্প ছড়ানাে। এটি শুধু বাঙালির নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যই নয়, বাংলা ভাষারও নারীস্বভাবী চারিত্র। মাতৃস্বভাবের করুণা, আশ্রয়দাত্রীর রক্ষয়িত্রী-পালয়িত্রীর ভূমিকা এবং অবশ্যই সৃষ্টিশীলতা—সন্তান জন্মের এষণাশক্তি আমাদের ভাষাগত কাঠামােশৃঙ্খলাই শুধু নয়, ভাষার অন্তর্লীন সৌন্দর্যশক্তিও গড়ে তুলেছে। তাই পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বলয় কিংবা শ্রেণি-অস্তিত্ব ভেদ করে এই ডায়েরির লেখক হয়ে উঠেছেন ‘শহিদ জননী।