ঐতিহ্য, সভ্যতা ও সংস্কৃতি তিনটি ভিন্ন শব্দ হলেও অর্থ ও তাৎপর্যগত দিক থেকে এ তিনটি শব্দের মধ্যে এক গভীর অন্তর্নিহিত সম্পর্ক বিদ্যমান। ঐতিহ্য একটি বিশেষ দেশ বা জাতির দীর্ঘকালের আচরিত রীতি-নীতি, রুচি, মূল্যবোধ ও সৌন্দর্য্যকে ধারণ করে। তা থেকে মানুষ অনুপ্রেরণা লাভ করে, জীবনায়নে, ভবিষ্যত জীবনধারা পরিগঠনে ও জাতির স্বপ্ন-সম্ভবনার ভিৎ নির্মাণে ঐতিহ্য বিপুলভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে, সভ্যতা মানবজাতির এক সামষ্টিক অর্জন দীর্ঘকালের শ্রম ও সাধনার ফল। ঐতিহ্য ভাবগত, সভ্যতা বস্তুগত। ঐতিহ্য আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে থাকলেও আমরা তা আমাদের হৃদয় ও অনুভূতিতে ধারণ করি, আমাদের ভাব-জগতকে তা অনুপ্রাণিত করে। সভ্যতা আমাদের বোধ ও দৃষ্টির অন্তর্গত। সভ্যতা আমাদের সমাজ ও জীবনের বস্তুগত উন্নতির স্বাক্ষর বহন করে। সভ্যতার দৃশ্যমান অবস্থা আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে, প্রায়োগিক ক্ষেত্রে আমরা তার ফল ভোগ করি এবং তা থেকে জীবনকে সমৃদ্ধ ও সৌন্দর্য্যম-িত করে তোলার প্রয়াস পাই। গ্রন্থভুক্ত দু’টি পৃথক নিবন্ধে এ সম্পর্কে যথাসম্ভব আলোচনার প্রয়াস পেয়েছি।
অন্যদিকে, ‘সংস্কৃতি’ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। এককথায় এর অর্থ প্রকাশ করা কঠিন। তাই বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন শব্দে এর অর্থ প্রকাশ করে থাকেন। ইংরাজি ঈঁষঃঁৎব-এর প্রতিশব্দ হিসাবে বাংলায় সংস্কৃতি, কৃষ্টি, তমদ্দুন ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিভিন্ন মনীষী এসব শব্দের বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা প্রদান করে এর অর্থ বুঝাবার প্রয়াস পেয়েছেন। শব্দ বা প্রতিশব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন স্থায়ী নিয়ম নেই। নদীর স্রোতের মতই শব্দের রূপ, অর্থ ও ব্যঞ্জনায় পরিবর্তন ঘটে। ঈঁষঃঁৎব-এর প্রতিশব্দ রূপে একসময় ‘তমদ্দুন’ শব্দটি যেমন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো, তেমনি ‘কৃষ্টি’ শব্দটির প্রচলনও একসময় যথেষ্ট ছিল। তবে ইদানিং ‘সংস্কৃতি’ শব্দটিই অধিক ব্যবহৃত হয় বলে এখানে এ শব্দটিই ব্যবহৃত হলো।