বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে হাসান অরিন্দম নামটি অপরিহার্য বলা যায়। ‘গলে পড়ছে সময়ের মোম’ তাঁর সপ্তম গল্পগ্রন্থ। এ বইয়ে যে আটটি গল্প স্থান পেয়েছে সেগুলো একটি বিশেষ সূত্রে গাঁথা, লেখক এ রচনাসমূহে বাস্তবতার পরিসীমায় আবদ্ধ থাকেননি। এই জীবনের মধ্যে থেকে তিনি সন্ধান করেছেন অন্য এক জীবনের স্বরূপ। ভাবনা ও পরিপার্শ্বের স্বতন্ত্র রূপায়ণকে পাঠক জাদুবাস্তব বা পরাবাস্তব বলে চিহ্নিত করতে পারেন। গল্পগুলোর বিষয়বস্তু ও প্রকাশভঙ্গি উভয়ক্ষেত্রেই লেখকের বিশেষত্ব নির্দেশ করে। উদ্ধৃত বাক্যগুলোর দ্বারা এই লেখকের মূল প্রবণতার কিছু ইঙ্গিত মেলে : ১. স্থির সময়ের জমাট বরফ গলে চুঁইয়ে চুঁইয়ে শীতল স্বচ্ছ জলের ফোঁটা পড়তে থাকে। ২. সেই অনাগত বিকেলে কম্পমান কাশফুলের ফাঁকে কান পাতলে কেউ হয়তো শুনতে পাবে দূরের কান্নার মতো কোনো অস্ফুট ধ্বনি। হয়তো মানুষের কান্নাই- অনাদিকালের বহু মানুষের! ৩. অবিকল তারই চেহারা ও বয়সের একজন যুবক গলায় ফাঁস নিয়ে গাছে ঝুলে আছে, তার কালচে জিভের অনেকটা বেরিয়ে আছে বাইরে, চোখজোড়া কাচের মার্বেলের মতো চেখাচ্ছে। ৪. প্রশ্ন জাগে অস্বাভাবিক চিন্তাগুলোও কি সংক্রামক হয়, নাকি অন্য এক মানুষ আমার ভেতর লুকিয়ে আছে যার চিন্তারাশি কোনো যুক্তি মানে না? ৫. মোটা অক্ষরে লাল কালিতে লেখা জেনে নাও তোমার মৃত্যুর ক্ষণ : ৫ জুন, ২০২৭ খ্রিস্টাব্দ, ভোর ৪টা ৫৭ মিনিট। ৬. সেখানে ভাবামাত্রই মানুষ কিংবা মাছেরা আকাশে উড়বার ডানা পেয়ে যায়। যেখানে প্রতিটি প্রাসাদ ও উদ্যান, এমনকি বন্ধু-স্বজন সরল মানুষের শ্রেষ্ঠ স্বপ্নের রঙ দিয়ে গড়া। ৭. আমাকে ধারালো অস্ত্র হাতে কারা যেন তাড়া করছে। আমি প্রাণপণে দৌড়াতে দৌড়াতে ফুটপাথে মুখ থুবড়ে পড়ে যাই। তখন ওরা হাতের কুড়াল দিয়ে আমাকে তিন খণ্ড করে ফেলল। ৮. যে-রাতে চারপাশে মৃদু-স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে ডানার লোকটি তার ঘরে দৃশ্যমান হলো তখন তানজিনা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। বাংলাদেশের একজন গল্পকার ও প্রাবন্ধিক রূপে ড. হাসান অরিন্দম পরিচিতি লাভ করেছেন। কথাসাহিত্যই তাঁর সৃষ্টি ও আগ্রহের প্রধান ক্ষেত্র।