২০৫৬ সাল থেকে ২০৫৮ সাল, এই ৩ বছরে আমি লন্ডনের স্বনামধন্য বিজ্ঞানীদের সাথে নিয়মিত কাজ করেছি। দিনরাত ব্যস্ত থেকেছি গবেষণার কাজে। কঠিন ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছি। আমার এই কষ্ট বিফলে যায়নি। গবেষণার ফলাফল ইতিবাচক এসেছে। জানলে আশ্চর্য হবেন, আমার লাভলী এই মুহূর্তে ৮ মাসের গর্ভবতী। ওর গর্ভে থাকা সন্তান গর্ভকালীন বয়সের দিক দিয়ে আমার চাইতে ১ মাসের সিনিয়র। কেননা মায়ের গর্ভে আমি কেবল ৭ মাস ছিলাম। ভাবতেই কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগে! আমার এখনও মাঝে মধ্যে সবকিছু অবিশ্বস্যকর লাগে। মনে হয় যেন স্বপ্নে আছি। লাভলীর গর্ভধারণ ব্যাপারটা মোটেও সহজ ছিল না। বহু এনালাইসিস, টেস্ট, রি-ডিজাইন করতে হয়েছে আমাকে। মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিলাম। কিন্তু পুরোটা সময় লাভলী আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে। সাহস যুগিয়েছে। আমার এখনো মনে পড়ে, একদিন খুব মন খারাপ অবস্থায় বসে ছিলাম। সবকিছু অসহ্যকর লাগছিল। লাভলী এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বলে, ‘তোমার যে-কোন দরকারে আমাকে পাশে পাবে। একটুও দুশ্চিন্তা কোরো না।’ সেদিন আনন্দে চোখে পানি চলে এসেছিল। সাহসও পেয়েছিলাম। নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছিলাম। পথ চলতে গিয়ে জীবনে বহুবার হোঁচট খেয়েছি আমি। হতাশা, ব্যর্থতা, বাধাবিপত্তি এসেছে অসংখ্যবার। কিন্তু কখনো হাল ছাড়িনি। আমার সংগ্রাম আমি ঠিকই চালিয়ে গেছি। আর এযাবৎকালের সকল সংগ্রামের ফল এখন আমার কোলে। পরির মতোন দেখতে একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান। আমার মেয়ে। লাবণ্য। ইতিহাসের পাতায় তার কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কারণ সে পৃথিবীর প্রথম সন্তান যার জন্ম হয়েছে একটি অ্যান্ড্রয়েডের গর্ভে।