মাটির ওয়ারিশ শিরোনাম থেকে কবি শামীম আকতারের মানসজগতটিকে চিনে নেওয়া যায়। মূলত অধিকারবোধ আর সংক্ষোভের চেতনাধারী এ কবি সেই সুন্দরের অন্বেষায় থাকেন যে সুন্দর ক্ষুধার্তের নিঃস্বের অধিকারহীনের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন হয়ে আসবে। কখনও কখনও তাঁর স্বর অতিচকিত বটে কিংবা অপ্রসন্নতায় উদ্বেল, কিন্তু তা হেতুহীন নয়, সমকালের নানা অসঙ্গতির তিরবিদ্ধ কবির প্রতিবাদ তাঁকে জাগিয়ে রাখে অহর্নিশি। সেই স্বর শুনতে পাই স্পষ্ট- ‘নীরবতাই একপ্রকার প্রতিবাদ, প্রত্যাখ্যান/ নিরস্ত্রের অস্ত্র, শব্দে-বোনা গুয়ের্নিকা।’ (‘রক্তাহুতি’) প্রতিবেশচেতন, পরিস্থিতি-বিপর্যয়ের প্রতি সংবেদনময় তাঁকে খুঁজে পাই ‘করোনা গহন’ ‘পারমাণবিক শ্মশান’ কিংবা ‘তোমাকে আশ্রয় দেয়ার মাটি নেই পৃথিবীর’ প্রভৃতি কবিতায়। প্রেম, প্রকৃতি, প্রতিবাদ শামীম আকতারের কাব্যচারিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলেও তাঁর কাব্যোপকরণ বিচিত্র ঋদ্ধতায় পরিপূর্ণ। বিষণ্নতার উচ্চারণ তাঁকে কষ্ট দিলেও (‘রক্তে ভেজা গোলাপগুলো আর কাঁদে না’) আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই তাঁর অন্যতর মাত্রিকতায় যখন তিনি মানুষের শুভ বোধের জেগে ওঠার প্রত্যয়েই শেষ পর্যন্ত আস্থাশীল।