যেসব ছোটগল্প কালজয়ী বা চিরায়ত হয়েছে, সেগুলি তাদের বিষয় গৌরবে, নির্মাণ কুশলতায়, ভাষার সৌন্দর্যে, প্রকাশের সাবলীলতায় শুধু তাদের সময়ের নয়, সব সময়ের পাঠকের মন জয় করে নিয়েছে। এরকম গল্পের সংখ্যা যে খুব কম, তা নয়। এখনো বাংলাদেশে যেসব গল্প লেখা হচ্ছে, পঞ্চাশ-ষাটের দশক থেকে যেসব গল্প আমরা পড়ছি সেগুলির বেশ কিছু সময়ান্তরে পাঠকদের কাছে প্রিয় থেকে যাবে, তারা চিরায়ত হবে।
‘চিরায়ত দশ বাংলা গল্প’ কালজয়ী বাংলা ছোটগল্পকে পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ মাত্র। এখানে সংকলিত গল্পগুলি ঘোর বাস্তবধর্মী। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুল, মানিক বন্দোপাধ্যায় অথবা তারাশংকর গ্রামের জীবনের বাস্তবতা নিপুণ দক্ষতায় তুলে ধরেছেন। গ্রামের নিম্নবিত্তরাই এসব গল্পের কেন্দ্রে। তাদের প্রতিদিনের জীবনসংগ্রাম, দুঃখ-কষ্ট, দারিদ্র এবং সামাজিক অনাচারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে তাদের বেঁচে থাকা এগুলিই গল্পগুলিতে প্রাধান্য পেয়েছে। সমাজের তথাকথিত নিচতলার মানুষজনের আবেগ-অনুভূতি, ক্রোধ ও রিপু, প্রেম-ভালবাসা এবং অসহায় আক্রোশ ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে প্রতিটি গল্পে অসামান্য কিছু মুহূর্তের সৃষ্টি করেছেন। গল্পকাররা। এসব গল্পে, এবং অন্যান্য সব গল্পেও, চরিত্র সৃষ্টির অবিশ্বাস্য কুশলতায় এই মানুষগুলি অবিস্মরণীয় হয়ে উঠেছে। প্রত্যেকটি গল্পে ভাষার প্রকাশ বলিষ্ঠ কিন্তু স্বচ্ছ। কোনো গল্পের বর্ণনায় অস্পষ্টতা নেই। সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিটি গল্পই শুধু তাদের নিজেদের সময়ের নয়, সকল সময়ের বোধ-অনুভূতি, প্রেম-অভিমান, দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং মনস্তাত্ত্বিক নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে মূর্ত করেছে। হয়তো আরও একশ বছর পর এদেশে গ্রামীণ দারিদ্র থাকবে না, গ্রামগুলিও নগরের সকল সুবিধা ভোগ করবে, মেয়েরাও শিক্ষাদীক্ষায় এবং জীবনদক্ষতায় ভিন্ন এক উচ্চতায় চলে যাবে, কিন্তু তখনো এসব গল্প তাদের চিরন্তন আবেদন নিয়ে পাঠকদের কাছে প্রিয় থেকে যাবে।