দুটি কথা:
আমার শৈশব কাটে আলোকদিয়া চর এবং মাতুলালয় গণপত্যায়। শৈশব অতি আনন্দে কাটে। পিতা—মাতার সাথে ফেরিতে নদী পারাপার হওয়ার সময় পদ্মা নদীর থৈ থৈ জল, উত্তাল ঢেউ আমাকে কল্পনা জগতে নিয়ে যেত। গোয়ালন্দ থেকে ট্রেনে ভ্রমণের স্মৃতি আরও মধুর। ট্রেনের ছন্দ, হকারদের ডাকাডাকি আমাকে সুদূরপ্রসারী চিন্তায় ডুবিয়ে দিত। উথলী আব্দুল গণি সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বিশেষত সুনীল স্যারের সাহিত্যের ক্লাশ আমাকে প্রথম সাহিত্যের দিকে টানে। পোস্ট মাস্টার, ছুটি এবং বলাই গল্পগুলো স্যার এমনভাবে পড়াতেন যে মনে হতো রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং বসে বসে গল্প করছেন। আমার সহপাঠী সহপাঠিনীগণ ও সুনীল স্যার আজও স্মৃতিপটে ভাস্বর। কলেজে আলী আকবর স্যার “এ মাদার ইন ম্যানভিল” গল্পটি অসাধারণ পড়ান। এতিম বালকের প্রতি লেখিকার যে মাতৃত্ববোধ জেগে ওঠে, তা কল্পনার মাকে নয় মনে হয় সত্যি মাকে মনে করিয়ে দেয়। এছাড়া আমাকে দস্তয়োভস্কির ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট সাহিত্য রচনার পথে টানে। কাহিনী বিন্যাস এবং চরিত্র চিত্রনে তিনি অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এ গল্প প্রকাশে আমার পরিবারের সদস্যগণ অকুণ্ঠ সমর্থন করেছেন। বিশেষত কন্যা এবং পুত্র বিশেষভাবে সাহায্য করেছে। তাদেরকে কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করছি। আরও কৃতজ্ঞতা জানাই মানিকগঞ্জ বারের সাবেক সেক্রেটারি জনাব হেজাজুর রহমান খান বাকু ভাইকে, যার নেতৃত্বে মানিকগঞ্জ বার থেকে প্রথম ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। অন্যান্য বিজ্ঞ বন্ধুগণ উৎসাহ দিয়ে সাহস যুগিয়েছেন। আমার অন্নদাদি মানে ইন্দিরা ঘোষ ও দশচিড়া বাবুর বাড়ি খ্যাত ঘোষ পরিবার আমাকে বিভিন্নভাবে সমর্থন ও উৎসাহ দিয়েছেন, তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার পিতা—মাতা ছিলেন সহজ সরল। তাদের সেই সরল মুখ সর্বদা আমাকে সাহিত্য রচনায় নিবেদিত রাখে। পিতা নেই, মা এখনও আমদের মাঝে বেঁচে আছে। আমার এই ক্ষুদ্র রচনা তাঁদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলাম। আমার মাতামহ মাতামহী, পিতামহ পিতামহী যারা শিশুকালে আমাকে অনন্ত ভালোবাসা ও পরম স্নেহ দিয়েছেন তাঁদেরকে আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি। পাঠকগণের এই লেখা যদি কিঞ্চিৎ আনন্দ দেয় তবে নিজেকে সার্থক মনে করব।
অরবিন্দ পোদ্দার