তত্ত্ব, তথ্য এবং যুক্তিই প্রাবন্ধিকের মূলাদিমূল দিক। বর্তমান গ্রন্থে প্রবন্ধকার লোকায়ত ভাববলয়ে লীন থেকে শিল্পবোধের বিকাশ ঘটিয়েছেন। শ্রুতিফলে তাঁর আত্মজ স্বাতন্ত্র্য প্রকাশভঙ্গিকে এক ভিন্ন স্বরগ্রামে পৌঁছে দিয়েছে। এই প্রবন্ধ-সংকলনে লোকগানের ভেতর দিয়ে বাংলার চিরায়ত লোকায়ত দর্শনের স্বরূপ-প্রকৃতি এবং প্রাচীন থেকে সমকালের ঐতিহ্যিক মরমীয় সাধন সংস্কৃতিকে রূপ-রসে মর্মস্পর্শী করে তোলা হয়েছে। উপস্থাপিত প্রবন্ধগুলো বিষয়বিভূতিতে নয়; বরং এর প্রাণপ্রাচুর্য ভঙ্গি-ব্যঞ্জনেই প্রাণবান। শেকড়সন্ধানী লোকসাধক হালের লোকানুভবে ও নির্মিতির নন্দনে কাব্যনন্দন রবিঠাকুরকে দেখেছেন এপারকার দুরবিনে। জানিয়েছেন, রবীন্দ্র মনন-মানসিকতার একটা প্রকাণ্ড স্থান জুড়ে এপার বাংলার চালচিত্র। প্রবন্ধকার হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিতে ভারতীয় সুফি-বাউলতত্ত্ব-এর অন্তর্নিহিত ভাবসত্তাকে যুক্তিসিদ্ধ এবং সাম্প্রতিক বোধন্বয়ের অনুপূরক হিসেবে তুলে ধরেছেন। ফলে বক্তব্য পরিবেশনের সারৎসারতার নিক্তি বস্তুনিষ্ঠতায় ঝুঁকে আছে ব্যক্তিনিষ্ঠতাকে আপাত অস্বীকার করে। যদিও ব্যক্তিসত্তার ছাপ সাহিত্যসত্তায় পড়ে এবং পড়বেই। এখানেও তার ব্যত্যয় ঘটে নি। তবুও প্রাবন্ধিক এ ক্ষেত্রে স্বীয় প্রজ্ঞা প্রতীতি এবং আপ্তচিন্তার ব্যাপ্তিতে অটুট থেকেছেন। বিশুদ্ধ মননচর্চায় এবং মানব-প্রকৃতির স্বরূপ সন্ধানে এই প্রবন্ধ-সংকলন পাঠকের প্রাণরসকে প্রদীপ্ত করবে।