প্রসঙ্গ কথা
নুরুন্নাহার ও হালিমা খাতুন দুই জা একই সাথে বিধবা। নুরুন্নাহারের স্বামী এম.এ রাজ্জাক আওয়ামী লীগ করতেন, সমাজকল্যাণমূলক কাজ করতেন, ১৯৭১ সালে তাকে না পেয়ে তার ভাই আবদুল লতিফকে রাজাকারদের সংবাদের ভিত্তিতে ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে মেরে লাশ কংশ নদীতে ভাসিয়ে দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তার লাশ পরবর্তীতে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
হালিমা খাতুনের তখন অল্প বয়স। চার সন্তান নিয়ে বিধবা হন। বাচ্চারা বাবার কথা বলে, সবার বাবার কবর আছে আমার বাবার কবর কোথায়?
ভাই মারা যাওয়ার পর রাজ্জাক দেশে না থেকে ভারতে শরণার্থী শিবিরে চলে যান। সেখানে তিনি মুক্তিযােদ্ধাদের হয়ে কাজ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি যখন দেশে ফিরে আসেন, আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন তখন শক্ররা তার উপর হামলা করেন। ১২ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে ভর্তি থাকা অবস্থায় কালো মুখোশ পরিহিত কয়েকজন মানুষ তাকে স্টেনগান দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেন। সেই থেকে নুরুন্নাহার বেগম দুই সন্তান নিয়ে বিধবা।
২৬ মার্চ ২০২১ সালে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হচ্ছে—অন্যদিকে দুই বিধবা তাদের বিধবা জীবনের সুবর্ণজয়ন্তী বা কষ্টের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছেন। ৫০ বছর বৈধব্য জীবন পার করে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট হালিমা খাতুন মারা যান। হালিমা খাতুনের একটাই ছেলে ছিল, সেই ছেলেটাও ৩রা আগস্ট ২০০৮ সালে মারা যায়। স্বামী হারা সন্তানহারা এক বিধবা হালিমা বেগম।
নুরুন্নাহার বেগম-এর তিন সন্তান, একজনের বয়স ৫ ও আরেক জন ৯ মাসের বাচ্চা নিয়ে বিধবা হন এবং একটা ছেলে ছিল সেই ছেলেটাও মারা যায় ১ বছর বয়সে। ১৯৭২ সাল থেকে তিনি বিধবা। এখনো বেঁচে আছেন। স্বামী সন্তানের মৃত্যুতে কলিজাটাকে যেমন ফোড় করে দিয়ে চলে গেছে এখন শুধুই মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
নুরুন্নাহার ও হালিমা খাতুনের সাক্ষাৎকারের এই উপন্যাস লেখা, বহু দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে এই বই ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বিধবা’ লেখা।
স্বাধীন বাংলাদেশে এমন হাজারো নুরুন্নাহার ও হালিমার কষ্টের কাহিনী হয়তাে আমাদের মাঝে ছড়িয়ে আছে। তাঁদের জীবনের কাহিনীগুলো মুক্তিযুদ্ধ ও বিধবা কথন’ বইয়ে তুলে ধরা হলো।