সৃজনশীলতার নিরন্তর পরিব্রাজক কবি নাসের ভূট্টো’র আজন্ম শ্লোগান প্রচলিত সমাজ ও অসুন্দরের বিরুদ্ধে। প্রয়োজনে ভেঙেছে বৈষম্য আর প্রথা, প্রত্যাখান তার স্বাভাবজাত। বাস্তবতার ঘোর ঠেলে খুঁজে ফেরেন দিগন্তের আভা, বৃক্ষের নিবিড় পাঠ আর সুন্দরের অনন্ত বৈভব। অবিশ্বাসী ও স্বার্থান্ধদের দখলে যখন পৃথিবী, অধিকাংশ মানুষ যখন প্রথার অলাতচক্রে নিপতিত, যার ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত কবিতা, মানবিকতা ও সভ্যতা। তখন বোধ নয়, বোধাতীত বিস্ময়ে জাগরণ ঘটান চারপাশের নিরন্তর শুভকে। প্রেমে তিনি আকাশের মতো কোমল, কামে প্রজ্বলিত, তাই পতিত সমাজ ও নষ্ট রাষ্ট্র দেখে ক্ষুদ্ধ। নাসের ভূট্টো প্রথাবিরোধী লেখক। তিনি মূলত কবি ও প্রাবন্ধিক। বেড়ে উঠে গ্রাম-শহর টানাপোড়নে। বিষয় আশয়ের প্যাঁচ, সংসারের গোলক ধাঁধা অথবা মানুষের জটিলতা এসবের সাথে খাপ না খাওয়া এক আশ্চর্য মানুষ। তারপরও প্রতিদিন বর্ণচাষ করেন মননের পৃষ্ঠায়। নাসের ভূট্টো নব্বই দশকের কবি। তিনি কবিতা চাষ করেন জীবন বিকাশের মতো ধীরে ধীরে। তার ভাষা ভিন্ন, গভীর অনুভূতির ছোঁয়ায় যা পঙ্ক্তিতে পঙ্ক্তিতে আলোড়িত। সত্য প্রকাশের অঙ্গিকারে যেমন উঠে এসেছে বেদনার জন্মভিটা তেমনি নষ্টালজিক, কু-সংস্কার, বৈশ্বিক ভাবনা, আধ্যাত্মবোধ ও গণমানুষের মুক্তি ছড়িয়ে আছে কবিতার পর কবিতায়। প্রতিক্ষণ কাব্যঘোরে আছন্ন এ-কবি সৃষ্টির শৈল্পিক অঙ্গীকারে আবদ্ধ থেকে দর্শন এবং নান্দনিক সংমিশ্রণে চিন্তার নব নির্মাণে প্রাগ্রসর। তাঁর কবিতায় সংহত উচ্চারণ ও বহুমাত্রিক ভাবে-বৈচিত্র্যে ফুটে উঠেছে আত্মক্ষরণের সর্বৈব মানচিত্র। রোমান্টিক এ-কবির কবিতায় প্রেম ও বেদনা শাশ্বত সত্য হয়ে অন্তর্লীন অনুভূতির অভিঘাতে মর্মরিত। তিনি তাঁর কাব্যসমগ্রে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেনÑ উত্তাপ স্পর্শে ঘুরে যাওয়া গতিপথ, নির্বাসনের মূল্যে অর্জন করা আত্মশুদ্ধি ও মানুষের বিশ্বাসের অন্তঃসারশূন্যতা।