প্রিয় পাঠক, চলুন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ভ্রমণসঙ্গী হই, তার সঙ্গে উড়াল দিই, চলে যাই বিলাতে-ওই তাে আমাদের চোখের সামনে বাকিংহাম প্যালেস কিংবা টেমস নদী কিংবা অক্সফোর্ড। অথবা আমরা এখন যাত্রী পাতালরেলের। সব কিছু জীবন্ত আর বাস্তব, প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি ভবন, প্রতিটা বাগান আর প্রতিটা চরিত্র। কিন্তু শুধু নিজের চোখে দেখার চেয়ে এই দেখা আরও মূল্যবান, অনেক বেশি প্রাণবন্ত, অনেক বেশি আনন্দময়-কারণ কেবল চোখের দেখা তাে নয় এই দেখা- সঙ্গে পাচ্ছি ইতিহাসের প্রেক্ষাপট, পাচ্ছি। তুলনা-প্রতিতুলনা, পাচ্ছি গল্পের উত্তেজনা, পাচ্ছি। প্রাণবন্ত সব চরিত্র আর তাদের সংলাপ, নানা রকমের ঘটনা, যা আমাদেরকে কখনও হাসায়, কখনও ভাবায়, কখনও বা মন খারাপ করিয়ে দেয়। পরিব্রাজন চলতে থাকে, আমরা একে একে বিভিন্ন স্থান দেখতে থাকি, কিন্তু মনের ভেতরে ক্রিয়া করতে থাকে নানা প্রশ্ন, কেন লেখকের বাল্যবন্ধু ফারুক আড়াই পাউন্ডের ফিশফিংগারের দাম তাঁর কাছ থেকে আদায় করেই ছাড়লেন, কিংবা কেন শ্বেতাঙ্গিনী বৃদ্ধা লেখকের প্রশ্নের জবাব দিল না? ওড়াউড়ির দিন-২ কেবল ভ্রমণকাহিনী নয়, এ হলাে সাহিত্য, শিল্প, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, মনােবিজ্ঞান, শিল্পকলার এক অপূর্ব সমাহার; কিন্তু লেখকের নিপুণতায় এসব হয়ে উঠেছে রম্যগল্পের মতাে উপভােগ্য ও রসময়। বাংলাদেশে বাংলা সাহিত্যে প্রসাদগুণময় দীপিত উজ্জ্বল মেধাবী গদ্য ক্রমশ বিরল হয়ে উঠেছে, শুধু স্বাদু ও ঋদ্ধ গদ্যের আদর্শ হিসেবেও এই গ্রন্থকে আমাদের অবশ্যপাঠ্য গণ্য করা যায়।