‘সোনার দেশ বাংলাদেশ’ বইটির প্রথম ফ্লাপের লেখা:
ছবির মতাে সুন্দর আমাদের দেশ । নরম, সবুজ গালিচা বিছানাে মাঠ। গাছে গাছে ফুল-পাখি। তির তির বয়ে চলা রূপালী নদী। নদীতে নানা রঙের পাল তােলা নাও। নদীর তীর ঘেঁষে কাশবন। সােনা উপচানাে ধান ক্ষেত আর হলদে মিঠা সরষের ক্ষেত। উপরে নীল সামিয়ানা। সেখানে রােদ, মেঘ, রঙধনু আর হিরার-কুচি তারার মেলা। নদীর বাঁকে বাঁকে সবুজ ঘেরা গাঁও। হিজলজারুলের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেয় রক পাখির ডিমের মতাে সাদা গম্বুজ। আজানের সুর আর পাখির গানে গানে ভাের হয়। সন্ধ্যা নামে। পরিশ্রমী আর সাহসী মানুষেরা দিনভর সােনা ফলায় সােনার মাঠে। এ দেশের ইতিহাসের পাতায় পাতায় বীরত্ব আর মহত্বের গল্প। এ যেন আরব্য রজনীর শাহেরযাদীর কাহিনী। হ্যা, তাই। আমাদের পূর্বপুরুষদের ছিল শির উঁচু করা শিল্পের গৌরব। ইংরেজ আসার আগেও এ দেশ ছিল সেরা শিল্পোন্নত দেশ। নানা দেশের বণিকরা আসতেন। এ দেশের সওদাগরেরা যেতেন ইরান-তুরান, চীনমালাবার। এই বাংলার নীলে-রাঙানাে মসলিন পাওয়া গেছে মিশরের মমিতে । বাংলাদেশের রেশমী কাপড় ছিল রােমের রাণীর পােশাক। আমাদের জাহাজ কিনতে তুরস্কের সুলতান লােক পাঠাতেন সন্দ্বীপে । এ দেশ সেই দেশ, যে-দেশ বিখ্যাত ছিল জাহাজ, কাগজ, নীল, পাট, গুড় আর লাক্ষার জন্য। ইতিহাসের পাতা থেকে ধূলা ঝেড়ে আমি তােমাদের উপহার দিলাম সেসব উজ্জ্বল কাহিনী, যা না জেনে কেউ আত্মপরিচয় গড়তে পারে না। আমাদের দেশ ছােট হলেও জাতি হিসেবে আমরা ছিলাম অনেক বড়। আজো আমরা ছােট নই। আবার আমরা বড় হতে চাই। তাই আমাদের গৌরবময় অতীত জানা। দরকার । জানানাে দরকার সবাইকে। এসাে শুরু করা যাক ।