“বিবাহ বার্ষিকী ও অন্যান্য গল্প” বইটিতে লেখা ফ্ল্যাপের কথা: জীবন যদি হয় সমুদ্র, তবে ছোটগল্প তার বিজগুড়ি; কেননা ছোটগল্প। জীবনেরই খন্ডাংশ, তারচে’ বলা ভালো খন্ডচিত্র। এই চিত্রাপিত মুহূর্ত অংকনে। বড় ক্যানভাসের প্রয়ােজন হয় না; কিন্তু।
বিশ্বজিতের গল্পগুলো ধারণ করে তেমনই আয়োজন, যা উপন্যাসের উপাদানে সমৃদ্ধ। গল্প পাঠ শেষে তাই অনুভূতি সমূহ বিস্তৃত হয় দিগন্তসীমায়।
নূর আলী মাস্টার, হাজতের তিন অপরাধী, স্টেশনের শ্যামলা মেয়ে ও ‘ফেরারী যুবক, নার্সিসাস শাহানা,। দুর্বলচিত্তের হরপ্রসাদ, পিনমারা চটি বই-পড়া শাহরিয়ার, ইনসমনিয়ায় ভােগা মফিজ সাহেব, চাকুরে আকরাম, লৌকিক-অলৌকিকে একাকার পরীবানু; প্রত্যেকের জীবনগল্পই যেন একেকটি উপন্যাসের অংশ। আয়তনের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে গল্পগুলো এভাবেই। জীবনবোধ সম্পন্ন মহীরুহ হয়ে যায় ।
নয়টি গল্পে সাজানো এই গ্রন্থ শুধু প্রকরণ নির্ভর হয়ে ওঠেনি বলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কখনওই বিরক্তি বা একঘেঁয়েমির ঝাপটায় আক্রান্ত হয় না। নির্ভার, মেদহীন গদ্যে বিশ্বজিৎ চৌধুরী। যে জীবন চিত্র আঁকেন, তা প্রায়শ হয়ে ওঠে আমার, আপনার কিংবা তার; এক। কথায় পাঠক সমাজের। তার অর্থ এই। নয় যে, বিশ্বজিৎ গল্প লেখেন পাঠকের ‘মুখ চেয়ে; বরং উল্টো করে বলা ভালো।
তিনি তার অভিজ্ঞতার কথাই বলেন। অক্ষরের বুনটে। যে কারণে বিশ্বজিতের। গল্প ষোলআনা বিশ্বাস্য হয়ে ওঠে এবং জায়মান বোধে পাঠক মাত্রই বিদ্ধ হয়। “যেভাবে সে মহৎ হয়ে ওঠে’, এইসব ‘ অপরাধী’, ‘অপরিচয়’, ‘আয়না ও । অবশিষ্ট’, যেভাবে চুরি হয়ে যায়, ‘সুখ-অসুখ’, স্নায়বিক’, ‘বিবাহ বার্ষিকী’ কিংবা আত্মহত্যার গল্প’ এবং রূপগঞ্জের হাটবাজার’; শিল্পসৃষ্টির এই নয়টি প্রয়াস দীর্ঘদিনই বিভা ছড়িয়ে।
যাবে আমাদের সাহিত্য অঙ্গনে, আলাদা ভাবে সনাক্ত করা যাবে। বিশিষ্টভাবে, যা নিরাভরন ও অকপট উচ্চারণের জন্যেই উল্লেখ্য হয়ে উঠবে।
আবু সাঈদ জুবেরী